CPM

সিএজি-কে দ্রুত অডিটের আর্জি হাওড়া সিপিএমের

দলের হাওড়া জেলা কমিটির সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, ‘‘ক্ষতিপূরণ বিলিতে যে ব্যাপক দূর্নীতি হয়েছে তা নিয়ে আমরাই প্রথম সরব হই।

Advertisement

নুরুল আবসার

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:২৫
Share:

—ফাইল চিত্র।

আমপানের ক্ষতিপূরণ দুর্নীতির মামলায় সিএজি-কে অডিটের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। সেই কাজ দ্রুত শুরুর জন্য সিএজি-র কাছে অনুরোধ করল হাওড়া জেলা সিপিএম।

Advertisement

দলের হাওড়া জেলা কমিটির সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, ‘‘ক্ষতিপূরণ বিলিতে যে ব্যাপক দূর্নীতি হয়েছে তা নিয়ে আমরাই প্রথম সরব হই। শাসকদলের ছোট-বড় নেতা এবং পঞ্চায়েতের পদাধিকারীরা তাঁদের ঘনিষ্ঠজনদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নামে সরকারি টাকা কার্যত লুট করেছেন। অডিট হওয়ার পরে বোঝা যাবে দুর্নীতির বহর কতটা।’’

জেলা প্রশাসনের হিসেব মতো আমপানে হাওড়ায় প্রায় ১৫ হাজার বাড়ি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাড়ির মালিকদের ২০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ক্ষতিপূরণ দেওয়াকে কে‌ন্দ্র করে বিস্তর অভিযোগ ওঠে। ক্ষতিপূরণের প্রথম তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরে দেখা যায়, এমন সব মানুষের নাম প্রাপকের তালিকায় উঠেছে, যাঁদের কোনও ক্ষতি হয়নি। আবার প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের নাম বাদ পড়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।

Advertisement

সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ওঠে সাঁকরাইল এবং পাঁচলা ব্লক থেকে। সাঁকরাইলে আবার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে শাসকদলের পক্ষ থেকেই। জেলাশাসক তদন্তের নির্দেশ দেন। অভিযোগের সত্যতা প্রাথমিক ভাবে প্রমাণিত হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই তালিকা বাতিল করে বিডিও-র নেতৃত্বাধীন টাস্ক ফোর্সের মাধ্যমে নতুন করে তালিকা তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। একই নির্দেশ দেওয়া হয় বাকি ব্লকগুলিতেও।

একই ধরনের অভিযোগ ওঠে পাঁচলা ব্লকেও। সেখানে আবার আগ বাড়িয়ে তৃণমূল শাসিত পঞ্চায়েত সমিতি ভুয়ো ক্ষতিপূরণ প্রাপকদের কাছ থেকে টাকা ফেরত নেওয়া শুরু করে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাকি ব্লকগুলিতেও ভুয়ো ক্ষতিপূরণ প্রাপকদের কাছ থেকে টাকা ফেরত নেওয়ার কথা বলা হয়। টাস্ক ফোর্স ক্ষতিগ্রস্তদের যে তালিকা তৈরি করে তা ব্লক অফিসে ঝুলিয়ে দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়।

সিপিএমের অভিযোগ, জেলা প্রশাসনের কোনও নির্দেশ মানা হয়নি। বেশিরভাগ ব্লকে তালিকা ঝোলানো হয়নি। যে দু’একটি ব্লকে তালিকা ঝোলানো হয়, তা দু’দিনের মধ্যেই ছিঁড়ে ফেলা হয়। ফলে, তালিকায় কারা আছেন তা গ্রামবাসীরা জানতে পারেননি।

জেলা প্রশাসনের দাবি, শতাধিক ভূয়ো ক্ষতিপূরণ প্রাপক টাকা ফেরত দিয়েছেন। ভুয়ো ক্ষতিগ্রস্তদের নাম তালিকা থেকে কেটে বাদ দেওয়া হয়। সবচেয়ে বেশি ভুয়ো ক্ষতিপূরণ প্রাপক (৫৮ জন) টাকা ফেরত দিয়েছেন পাঁচলায়। এরপরেই আছে ডোমজুড়। এখানে ২০ জন টাকা ফেরত দিয়েছেন। বাকি ব্লকগুলিতে কোথাও তিন জন, আবার কোথাও চার জন টাকা ফেরত দিয়েছেন।

বিপ্লববাবু বলেন, ‘‘টাকা ফেরতের দাবি জানিয়ে আমরা পাঁচলায় আন্দোলন করি। ভুয়ো ক্ষতিপূরণ প্রাপকদের কাছে গিয়ে আমরা হাতজোড় করে বলি, জনগণের

টাকা এ ভাবে নেবেন না। ফলে, অনেকে টাকা ফেরত দিয়েছেন। তার ফলে পাঁচলায় টাকা ফেরতের হার বেশি। এটা আমাদের আন্দোলনের সাফল্য।’’

দ্রুত অডিট করানোর দাবি তুলেছে বিজেপি এবং কংগ্রেসও। তৃণমূল অবশ্য সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। গ্রামীণ জেলা তৃণমূল সভাপতি পুলক রায় বলেন, ‘‘দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তেরা কেউ বঞ্চিত হননি। কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল। তা দলীয় ও প্রশাসনিক স্তরে দূর করা হয়েছে।’’

অডিট নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি জেলা প্রশাসনের কর্তারা। তবে জেলা প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, ‘‘ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত সব কাজ স্বচ্ছতার সঙ্গে করা হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement