অবৈধ: উলুবেড়িয়ায় নদীপথে এভাবেই পাচার হয় চোলাই।ছবি: সু্ব্রত জানা
স্থায়ী ‘ঠেকের’ রমরমা কমেছে। পরিবর্তে এসেছে ‘ভ্রাম্যমাণ ঠেক’।
বিপণন কৌশল বদলে হাওড়ার গ্রামীণ এলাকায় চোলাই মদের ব্যবসা ফের স্বমহিমায়। ভাটিতে মদ তৈরির পরে সাইকেল, মোটরবাইক বা ছোট গাড়িতে করে চোলাই চালান হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। তার পরে পাউচে করে তা পৌঁছে যাচ্ছে ক্রেতাদের হাতে। সাইকেল-মোটরবাইকে এ ভাবে বিক্রিটাকেই ‘ভ্রাম্যমাণ ঠেক’ বলছেন গ্রামবাসীরা।
শনিবার বিকেলে উলুবেড়িয়ার লতিবপুর এবং যদুরবেড়িয়ায় শ’দুয়েক মহিলা ঝাঁটা হাতে অভিযানে নেমে দুই মদ বিক্রেতাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। গোলমালের খবর পেয়ে পুলিশ এলে তাদের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ হয়। দুই মদ বিক্রেতার বাড়ি থেকে প্রচুর মদ ভর্তি পাউচ উদ্ধার করে মহিলারা পুলিশের হাতে তুলে দেন। মহিলাদের অভিযোগ, তাঁদের চোখে প্রতিদিন যা ধরা পড়ে, তা পুলিশের নজরে পড়ে না।
কয়েক বছর আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সংগ্রামপুরে চোলাই খেয়ে বহু মানুষের মৃত্যুর পরে সর্বত্র অভিযানে নেমেছিল পুলিশ প্রশাসন। বহু মহিলাও গ্রামে গ্রামে চোলাইয়ের ঠেক ভেঙে দিয়েছিলেন। কারণ, চোলাই তাঁদের সংসারে বিপর্যয় ডেকে আনে। পুরুষরা রোজগারের সবটাই চোলাইয়ে উড়িয়ে দেন। ফলে, সংসারের অনটন বাড়তে থাকে। কিন্তু এত দিন পরেও দেখা যাচ্ছে গ্রামীণ হাওড়ার বিভিন্ন এলাকায় মদ বিক্রির ছবিটাই যা বদলেছে। মহিলাদের সমস্যা মেটেনি।
শনিবার রাতে যদুবেড়িয়ায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে চোলাই ঠেক ভাঙছেন মহিলারা। ছবি: সু্ব্রত জানা
এই জেলায় মদের ভাটির (যেখানে চোলাই তৈরি হয়) জায়গা হিসেবে অনেকেই উলুবেড়িয়ার মদাই, শাখাভাঙা, আমতলা, সোমরুক, বোয়ালিয়া, আমতলা এবং সুন্দরপুরের নাম করেন। মদাই, শাখাভাঙা হল গঙ্গার ধারে। বাকিগুলি দামোদরের ধারের গ্রাম। এই সব ভাটির মদই ছড়িয়ে পড়ে গ্রামে গ্রামে। এর মধ্যে মদাই গ্রামে ভাটির কারবার রীতিমতো কুটির শিল্পে পরিণত হয়েছে। কামিনা, তুলসীবেড়িয়া, মুর্গাবেড়িয়া প্রভৃতি জায়গায় খুল্লামখুল্লা বিক্রি হয় চোলাই। জেলার অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র ফুলেশ্বরে সেচবাংলো লাগোয়া মাঠে প্রতিদিন পড়ে থাকে চোলাইয়ের অসংখ্য পাউচ। এখানে গাছের নীচে আগুন জ্বেলে মাংস রান্নাও হয়। মদের সঙ্গে খাওয়ার জন্য। মহিলাদের অভিযোগ, পুলিশকে বারবার জানানো সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
এর মধ্যে স্থায়ী ‘ঠেক’ চোখে পড়ে কুলগাছিয়া স্টেশনের উত্তর দিকের প্ল্যাটফর্মের পাশে। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে ঠেক। রেলের কংক্রিটের স্লিপার ফেলে সেখানে তৈরি হয়েছে বেঞ্চ। কাচের গ্লাসে হাতে হাতে ফেরে মদ। জ্যারিকেনে ভরা মদ মজুত থাকে স্টেশনেরই একটি পরিত্যক্ত ভাঙা বাড়িতে। হত শুক্রবার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নেতৃত্বে মহিলারা চোলাই মদ বিক্রেতাদের তাড়া করেন। ওই সংস্থার কর্ণধার মন্টু শী অবশ্য বলেন, ‘‘এ ভাবে চোলাই মদ খাওয়া বন্ধ করা যাবে না। এর জন্য দরকার মদের চালান বন্ধ করা।’’
কিন্তু চোলাইয়ের চালান রুখবে কে?
সংশ্লিষ্ট গ্রামগুলির মহিলারা পুলিশের পাশাপাশি আবগারি দফতরকেও দুষছেন। তাঁদের অভিযোগ, ওই দু’পক্ষ সক্রিয় হলে চোলাইয়ের বাড়বাড়ন্ত কমানো যেত। কিন্তু তা হচ্ছে না। (চলবে...)