মহান: রক্ত দিচ্ছেন রবিন। —নিজস্ব িচত্র
মসজিদের মোয়াজ্জেমের রক্তের প্রয়োজন। সে কথা ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন এক সমাজকর্মী। সেই পোস্ট দেখে রক্ত দিলেন দুই হিন্দু যুবক।
জ্বরে আক্রান্ত উলুবেড়িয়া পারিজাত মসজিদের বছর সত্তরের মোয়াজ্জেম শেখ আনোয়ার আলিকে গত শনিবার রাতে উলুবেড়িয়ায় একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে দেখেন, আনোয়ারের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গিয়েছে। ফলে, রক্তের প্রয়োজন। আনোয়ারের রক্তের গ্রুপ ‘ও পজ়িটিভ’। তাঁর পরিবারের লোকজন রক্তের নমুনা নিয়ে উলুবেড়িয়া ব্লাড ব্যাঙ্কে গেলে তাঁদের জানানো হয়, সেখানে রক্ত নেই। রক্তদাতা আনলে রক্ত মিলবে। শুনে মাথায় হাত পড়ে তাঁদের। এ দিকে তখন চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, আনোয়ারের দুই ইউনিট রক্তের প্রয়োজন।
আনোয়ারের আত্মীয় পরিজনেরা তখন যোগাযোগ করেন পাঁচলার সমাজসেবী রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁরা শুনেছিলেন, রেজাউল অনেক থ্যালাসেমিয়া রোগীর জন্য রক্তদাতা জোগাড় করে দেন। আনোয়ারের জন্য রক্তদাতার খোঁজ শুরু করেন রেজাউল। কিন্তু না-মেলায় তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেন। সোমবার সেই পোস্টটি নজরে আসে শ্যামপুর ২ ব্লকের কর্মচারী রবিনের। তখন তিনি অফিস থেকে ফিরছিলেন।
রবিন বলেন, ‘‘ওই পোস্ট দেখেই দ্রুত যোগাযোগ করি ওঁদের সঙ্গে। তারপর উলুবেড়িয়া ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে রক্ত দিই।’’ রক্তের প্রয়োজনের কথা কানে এসেছিল চটকলের শ্রমিক কোটালঘাটার বাসিন্দা মিঠুনেরও। সোমবার তিনিও আনোয়ারের জন্য রক্তদান করেন। তাঁর কথায়, ‘‘বন্ধুর মুখে শুনলাম একটি মসজিদের মোয়াজ্জেমের রক্তের প্রয়োজন। কোনও কিছু না ভেবেই রাজি হয়ে গেলাম রক্ত দিতে। রক্তের জন্য এক জনের জীবন যাবে, এটা দেখা যাবে না। তাই রক্ত দিতে ছুটেছিলাম।’’ আর আনোয়ারের কথায়, ‘‘দুই ভিন্ন ধর্মের যুবক আমাকে রক্ত দিয়ে বাঁচালেন। এর চেয়ে বড় ধর্ম আর কী হতে পারে।’’
উলুবেড়িয়া হাসপাতালের সুপার সুদীপরঞ্জন কাঁড়ার বলেন, ‘‘লকডাউন চালু হওয়া থেকেই রাজ্যে রক্তের হাহাকার চলছে। রক্তদান শিবিরের সংখ্যা কমে গিয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে বেশ কিছু দিন রক্তদান শিবির বন্ধ ছিল। এখন চালু হয়েছে। ক্লাব সংগঠনগুলি শিবির করতে এগিয়ে এলে সমস্যার সমাধান হবে।’’