চমক: ব্যান্ডেল বাজারে ইলিশ বিক্রি। নিজস্ব চিত্র
ভরা ফাগুনে বাজারে গঙ্গার ইলিশ! তা-ও আবার প্রমাণ সাইজের। দামও নাগালের মধ্যে।
বুধবার সকালে থলে হাতে বাজারে ঢুকে একপ্রকার চমকেই গিয়েছিলেন ব্যান্ডেলের অমলকান্তি জোয়ারদার। পাকা জহুরির মতো নেড়েচেড়ে দু’টো ইলিশ কিনে হাঁটা লাগালেন বাড়ির দিকে। যাওয়ার সময় বলে গেলেন, ‘‘বাকিটা গিন্নির হাতযশ।’’
এ দিন ব্যান্ডেলের চকবাজারে আক্ষরিক অর্থেই ইলিশের ছড়াছড়ি। মুখে মুখে আলোচনা শুরু হয়ে যায়। খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ভোজন রসিকদের ভিড় বাড়তে থাকে। বাজারে গিয়ে দেখা গেল, ৮০০ থেকে সওয়া কেজি ওজনের ইলিশ বেশ কয়েকটি দোকানে শোভা পাচ্ছে। দাম— কেজি প্রতি আটশো থেকে ন’শো টাকা। অনেককেই বলতে শোনা গেল, গঙ্গার প্রমাণ সাইজের ইলিশ এখন পাতে পড়েই না। তার উপরে এই দাম লটারি পাওয়ার মতো! এমন সুযোগ তাই হাতছাড়া করতে চাননি অনেকেই। ইলিশের চেহারা দেখে পকেট থেকে মোবাইল বের করে কর্তা ফোন করেছেন গিন্নিকে। সর্ষে বাটা হবে নাকি বেগুন দিয়ে ঝোল— তা নিয়ে একপ্রস্ত আলোচনা সেরে নিয়েছেন ফোনেই।
অমলকান্তি বলেন, ‘‘বর্ষার মরসুম বাদে নাগালের মধ্যে ভাল ইলিশ পাওয়া যায় কোথায়! বর্ষার সময়েও দাম সব সময় নাগালের মধ্যে থাকে না। আজ তাই অবাকই হয়েছি। পাতে ইলিশের গন্ধ মানেই ভেতো বাঙালির পোয়াবারো।’’ চুঁচুড়ার বাসিন্দা শ্রাবন্তী দাসের কথায়, ‘‘ইলিশ হল মাছের রাজা। এই অসময়ে কম দামে গঙ্গার ইলিশ কিনতে পেরে ভালই লাগছে।’’
এক সময় হুগলির গঙ্গায় প্রচুর ইলিশ মাছ উঠত। অনেকেরই আক্ষেপ, দূষণের জেরে এবং মৎস্যজীবীদের ছোট মাছ ধরার প্রবণতার কারণে গঙ্গায় রূপোলি শষ্যের আকাল দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে গঙ্গায় ফের বড় আকারের ইলিশের আনাগোনায় তাঁরা উৎসাহিত। মাছ ব্যবসায়ী নেপাল সরকার বলেন, ‘‘বিধিনিষেধের জেরে ছোট ইলিশ ধরা কমেছে। সেই কারণেই বোধ হয় বড় মাছ উঠছে। মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে গঙ্গার টাটকা ইলিশ বেচতে পেরে ভালই লাগছে।’’
সব দেখেশুনে উৎসাহিত মৎস্য দফতরের কর্তারা। তাঁরা মনে করছেন, প্রচারের গুণেই কাজ হয়েছে।
কী রকম?
হুগলি জেলার সহকারী মৎস্য অধিকর্তা পার্থসারথি কুণ্ডু জানান, ছোট ইলিশ ধরার প্রবণতার ফলে গঙ্গায় ইলিশের সঙ্কট তৈরি হচ্ছিল। এই কারণে ছোট ইলিশ ধরতে বাজারে বাজারে অভিযান চালানো হয়। ছোট ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বিভিন্ন জায়গায় হোর্ডিং লাগানো হয়। লিফলেট বিলি করা হয়। মৎস্যজীবীদেরও সচেতন করা হয়। তাঁদের নির্দিষ্ট ঘনত্বের কম ফাঁসের জাল ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়। পার্থসারথিবাবু বলেন, ‘‘মৎস্যজীবীদের বোঝানো হয়েছে, তাঁদের মাছ তাঁদেরই থাকবে। বড় হওয়ার পরে সেই মাছ ধরলে তার সুফল ভবিষ্যতে মিলবে। লাগাতার প্রচারের ফলে মৎস্যজীবীরা যে অনেকটা সচেতন হয়েছেন, বাজারে ইলিশের মাপ দেখে সেটাই বোঝাই যাচ্ছে। এই প্রচার চলতে থাকবে।’’