Laldighi

সংস্কার করতে গিয়ে ভাঙল লালদিঘির ঘাট

বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, ওই ঘাটকে অবিলম্বে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হোক।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

চন্দননগর শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:০৩
Share:

ধূলিস্মাৎ: ভেঙে পড়ে রয়েছে লালদিঘির ঘাট (বাঁ দিকে) পুরনো ঘাট (ডান দিকে)। ছবি: তাপস ঘোষ

সংস্কার করতে গিয়ে চন্দননগরের ফরাসি আমলের ঐতিহাসিক লালদিঘির ঘাটটাই ভেঙে ফেলা হল। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, ওই ঘাটকে অবিলম্বে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হোক।

Advertisement

গঙ্গার পশ্চিম পাড়ের শহর চন্দননগর এক সময় ফরাসি উপনিবেশ ছিল। সেই আমলের বহু ঐতিহাসিক নির্দশন শহরে আজও রয়েছে। রাজ্য সরকারের হেরিটেজ কমিশন শহরের বহু ঐতিহাসিক নির্দশনকে তালিকায় রেখেছে। প্রশাসনিক স্তরে সেই সব নিদর্শনের রক্ষণাবেক্ষণও হয়। চন্দননগরের স্ট্র্যান্ডঘাট হেরিটেজ তালিকাভুক্ত। ওই ঘাটে সম্প্রতি রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি বহু সংস্থা অনুষ্ঠান শুরু করেন। এতে আপত্তি জানিয়েছিলেন শহরবাসী। সম্প্রতি প্রশাসনের তরফে ওই ঘাটে সব অনুষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

স্ট্র্যান্ডঘাটের মতোই ফরাসি আমলের অন্যতম ঐতিহাসিক স্মারক লালদিঘি। জিটি রোড এবং কৃষ্ণভাবিনী নারী শিক্ষামন্দির লাগোয়া জায়গায় অবস্থান ওই লালদিঘির। প্রশস্ত সেই দিঘির ঘাট এক সময় শহরের মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। সকাল-বিকেল ঘাটে আসতেন বয়স্করা। কিন্তু সংস্কারের অভাবে বেহাল হয়ে পড়েছিল লালদিঘি ঘাট। এলাকার যাবতীয় আবর্জনা দিঘির জলে ও পাড়ে ফেলা হচ্ছিল। তার জেরে দূষণ ছড়াচ্ছিল।

Advertisement

ওই ঘাটের লাগোয়া একটা বড় বস্তি রয়েছে। সেই বস্তির বেশিরভাগ বাসিন্দাই পুরসভার সাফাই কর্মী। ওই দিঘির পাড়ের ওই বস্তির নিকাশি ব্যবস্থা নেই। পুর কর্মীরাই সেখানে পর্যাপ্ত পানীয় জল বা অন্যান্য সুযোগ পান না। এলাকার বাসিন্দারা আবেদন জানান, সরকারি প্রকল্পে পুরসভার সাফাই কর্মীদের জন্য আবাসন করে দেওয়া হোক। তাতে ওই দিঘির পাড়ের পরিসর বাড়বে। নিম্ন আয়ের পুরকর্মীরাও স্থায়ীভাবে তাঁদের মাথা গোঁজার জায়গা পাবেন।

চন্দননগরের পরিবেশ সচেতন বিভিন্ন সংস্থা ওই দিঘিটি সংস্কারের বিষয়ে প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করেন। সেই আবেদনে মহকুমা প্রশাসন ও পুরসভা সাড়া দিয়ে সংস্কার শুরুও করেন। সেই সময়ই দিঘির ঘাট ভেঙে ফেলা হয় বলে অভিযোগ। চন্দননগর পরিবেশ অ্যাকাডেমিকে বিষয়টি জানান পরিবেশ কর্মী সন্ধ্যাতারা মল্লিক। তিনি বলেন, ‘‘ওই দিঘিটি সংস্কার করতে গিয়ে কর্মীরা ঘাটটিই ভেঙে ফেললেন, এটা পরিতাপের বিষয়। পরিবেশ অ্যাকাডেমির পক্ষে মহকুমা প্রশাসন এবং পুর কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি।’’

লালদিঘির ওই ঐতিহাসিক ঘাটটি ভেঙে ফেলায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন চন্দননগরের বাসিন্দা পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘ঐতিহাসিক নির্মাণ সংস্কারে প্রশিক্ষিত দক্ষ শ্রমিক আমাদের রাজ্যে রয়েছেন। হেরিটেজ কমিশনের তত্ত্বাবধানে তাঁরা রাজ্যের বহু ঐতিহাসিক বাড়িকে সংরক্ষণ করেছেন। এই ঘাটটি অনায়াসেই সেইভাবে সংরক্ষণ করা যেত।’’

পুর কমিশনার স্বপন কুণ্ডু অবশ্য বলেন, ‘‘লালদিঘির ওই প্রকল্প যে ভাবে তৈরি করা হয়েছে, তাতে ওই ঐতিহ্যকে অক্ষুণ্ণ রেখেই ঘাটটি সংরক্ষিত করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement