এই জমিতে আইটিআই কলেজ হওয়ার কথা। ছবি: দীপঙ্কর দে।
দশ বছর ধরে চণ্ডীতলার বিধায়ক স্বাতী খন্দকার। নৈটিতে বিধায়কের অফিস আছে। কালেভদ্রে সেখানে বিধায়কের দেখা মেলে, এমন অভিযোগ চণ্ডীতলায় কান পাতলেই শোনা যায়। দৃশ্যত সেই অফিস যেন তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়। স্থানীয় নেতাকর্মীদেরই ভিড় সারাক্ষণ। সাধারণ মানুষ বড় একটা যান না।
এলাকার এক প্রবীণের প্রশ্ন, ‘‘যেখানে বিধায়কের সরকারি কাজকর্ম করার কথা সেখানে চলছে পার্টি অফিস। এটা হয় নাকি? ওখানে যাব কেন?’’
মশাটে একটি কলেজ রয়েছে। বিদ্যাসাগর মহাবিদ্যালয়। তৈরি হয়েছিল বাম আমলে। একটি সাধারণ কলেজ এবং কারিগরি কলেজের দাবি রয়েছে ওই বিধানসভা এলাকায়। বিধায়কের থেকে কারিগরি কলেজের শুধু প্রতিশ্রুতি মিলেছে। এখনও কলেজ হয়নি।
এ তল্লাটের স্বাস্থ্য ব্যবস্থারই বা কী উন্নতি হল? পাড়ার আড্ডায়, চায়ের দোকানে, মাঠের ধারে বা রাস্তার জটলায় এ প্রশ্ন হামেশাই ওঠে। বাম আমলে তৈরি হয়েছিল চণ্ডীতলা গ্রামীণ হাসপাতাল। রাজ্য সরকারের তরফে ওই হাসপাতালকে সুপার স্পেশ্যালিটি স্তরে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। হয়নি সেই কাজও।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায়ই দাবি করেন, ‘‘সব করে দিয়েছি।’’ কিন্তু সব আর হল কোথায়?—এ প্রশ্ন চণ্ডীতলা বিধানসভার আমজনতারই। তাই বিধানসভা নির্বাচনের দোরগোড়ায় সাধারণ মানুষের ক্ষোভের হাঁ ক্রমেই চওড়া হচ্ছে। কিছুই যে হয়নি, তা-ও নয়। চণ্ডীতলা থেকে মশাট পর্যন্ত হাইমাস্ট আলো ঝলমল করছে। কালীপুরে বৈদ্যুতিক চুল্লি হওয়ায় শবদাহের সমস্যা মিটেছে। কিন্তু শুধু এমন কিছু কাজ দিয়ে এ বার বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতা ধরে রাখা য়াবে কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন শাসক দলের নেতারাই। তাঁদেরই একজন বলেন, ‘‘গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির থেকে আমরা মাত্র ১৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে ছিলাম। এখন পরিস্থিতি অন্যরকম। কী হবে, সেটাই মস্ত চিন্তার বিষয়।’’
চণ্ডীতলা বিধানসভা এলাকায় ২ লক্ষ ৮৫ হাজার লোকের বাস। ছাত্রছাত্রীদের একাংশ বিদ্যাসাগর মহাবিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। বাকি কলেজ পড়ুয়াদের যেতে হয় বেশ কয়েক কিলোমিটার উজিয়ে উত্তরপাড়া বা বেলুড় কলেজে। আর একটি কলেজ হলে সেই সমস্যা দূর হত বলে অনেকেই মনে করেন। তাঁদের মধ্যে জনাই বাকসা পঞ্চায়েতের মাধবপুরের বাসিন্দা, পেশায় শিক্ষক গোরাচাঁদ হাজরা বলেন, ‘‘স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে ইচ্ছে থাকলেও দূরত্বের কারণে উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকে। আমরা দাবি করছি, জনাই এলাকায় অন্তত একটি কলেজ তৈরি হোক।’’
সব কাজই বিধায়কের করার কথা, এমনও নয়। পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসন আছে। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের মুখে বিধায়কের কাজকর্ম নিয়েই আলোচনা ঘুরেফিরে আসছে।