Gondalpara Jute Mill

পুজোর পরে চালু হচ্ছে গোন্দলপাড়া জুটমিল

মিল বন্ধের পরে অনেক শ্রমিক ভিন্ রাজ্যে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। মিল খোলার ১৫ দিনের মধ্যে তাঁদের কাজে যোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।আর্থিক মন্দা, শ্রমিক অসন্তোষ-সহ নানা কারণ দেখিয়ে ২০১৮ সালের ২৭ মে ওই জুটমিলে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চন্দননগর শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২০ ০১:১৪
Share:

এই চিত্র পুেজার পরে দেখা যাবে না, আশায় শ্রমিকরা। — নিজস্ব িচত্র

সাড়ে আঠাশ মাস পরে পয়লা নভেম্বর থেকে খুলে যাচ্ছে চন্দননগরের গোন্দলপাড়া জুটমিলের বন্ধ দরজা।মিল বন্ধের পর থেকে অনেক চোখের জল ফেলেছেন শ্রমিকেরা। অর্ধাহার-অনাহারে তাঁদের দিন কেটেছে। চিকিৎসার সুযোগ মেলেনি। মিল খোলার দাবিতে ক্ষোভ-বিক্ষোভ, আন্দোলন কম হয়নি। এতদিন বাদে ফের উৎপাদন চালুর ঘোষণায় শ্রমিক মহল্লায় খুশির আবহ। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না-হওয়া পর্যন্ত পুরোপুরি স্বস্তি মিলবে না বলে শ্রমিকদের অনেকেই জানিয়েছেন।প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই জুটমিল নিয়ে বুধবার কলকাতায় ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয় শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের উপস্থিতিতে। রাজ্যের অতিরিক্ত শ্রম-কমিশনার তীর্থঙ্কর সেনগুপ্ত, উপ শ্রম-কমিশনার অনন্যা দত্ত চৌধুরী প্রমুখ শ্রমকর্তা ছিলেন। মিলের মালিক সঞ্জয় কাজোরিয়া এবং ১১টি শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বৈঠক চলে।

Advertisement

চন্দননগরের উপ শ্রম-কমিশনার কিংশুক সরকার জানান, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী ১ নভেম্বর থেকে মিল খুলবে। শ্রমিকদের পাওনা কর্তৃপক্ষ মিটিয়ে দেবেন। জুটমিলের নিয়ম অনুযায়ী তাঁরা মজুরি পাবেন। মিল বন্ধের পরে অনেক শ্রমিক ভিন্ রাজ্যে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। মিল খোলার ১৫ দিনের মধ্যে তাঁদের কাজে যোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।আর্থিক মন্দা, শ্রমিক অসন্তোষ-সহ নানা কারণ দেখিয়ে ২০১৮ সালের ২৭ মে ওই জুটমিলে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। ফলে, সেখানকার প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক কাজ হারান। লোকসভা ভোটের মুখে কয়েক দিনের জন্য কারখানা খোলে। ফের বন্ধ হয়ে যায়। উৎপাদন চালুর দাবিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন পথে নামে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের তরফে বিশেষ হেলদোল দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। কয়েক মাস আগে মিল খুলতে উদ্যোগী হন কর্তৃপক্ষ। তাঁদের তরফে শ্রমিক সংগঠনগুলিকে কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়। ৮ দফা প্রস্তাবের মধ্যে ৭টি ক্ষেত্রেই দু’পক্ষ সহমত হয়েছে বলে শ্রম দফতর সূত্রের খবর।

কিছু দিন আগে মিলের নাম পরিবর্তন হয়েছে। আগে মিলটি ছিল ‘রতনলাল এক্সপোর্ট লিমিটেড’-এর অধীনে। এখন এই মিল ‘শক্তিগড় টেক্সটাইল অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ় লিমিটেড’-এর অধীন। শ্রম দফতরের আধিকারিকদের বক্তব্য, এতে শ্রমিকদের সমস্যা হবে না। আইন অনুযায়ী নতুন সংস্থাই তাঁদের দায়ভার নেবে।তাঁত বিভাগের শ্রমিক উমেশ পাসোয়ান বলেন, ‘‘প্রায় আড়াই বছর মিল বন্ধ। আমাদের সংসার কী ভাবে চলছে, আমরাই জানি! মিল খোলার খবর শুনে ভাল লাগছে। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হচ্ছে, ততক্ষণ মনে শান্তি আসবে না।’’ লালু ঘোষ নামে অপর এক শ্রমিকের সংশয়, ‘‘আগের বারের মতো মিল খুলে কয়েক দিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যাবে না তো!’’ তাঁর কথায়, ‘‘দুর্দশা এবং পর পর মৃত্যুতে শ্রমিক পরিবারগুলির কাহিল অবস্থা। এ বার যেন সুষ্ঠু ভাবে মিল চলে।’’মিলের টাইম অফিস বিভাগের কর্মী তথা টিইউসিসি সম্পাদক রাজেশ জয়সোয়ারা বলেন, ‘‘অনেক আন্দোলনের ফলে একটা সদর্থক পরিস্থিতি তৈরি হল। এখন চাই শ্রমিক যাতে খেয়ে-পরে বাঁচতে পারে, সে জন্য উৎপাদন যেন আর বন্ধ না হয়।’’ একই বক্তব্য আইএনটিইউসি নেতা অশোক খাঁ, আইএনটিটিইউসি নেতা পরিমল সিংহরায়ের।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement