ভূগর্ভস্থ জলস্তরের অবস্থা সঙ্কটজনক গোঘাটের দু’টি ব্লকেই। কেন্দ্রীয় জলসম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন দফতরের ‘স্টেট ওয়াটার ইনভেস্টিগেশন ডিরেক্টরেট’ বা সুইড-এর পক্ষ থেকে সম্প্রতি দু’টি ব্লককেই ‘ব্ল্যাক জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে গোঘাট ২ ব্লককে ‘ক্রিটিক্যাল’ বলে ঘোষণা করেছে ওই সংস্থা। নতুন করে সেখানে নলকূপ বসানোর অনুমোদন দেওয়া হবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ভূগর্ভস্থ জলের পরিবর্তে বিকল্প ব্যবস্থার পরিকল্পনা চলছে। জেলা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পরিস্থিতি সত্যিই জটিল। সামাল দিতে গোঘাটে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর নিচু জমিতে পুকুর খনন করে প্রাকৃতিক জল ধরে রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ধরে রাখা জল পরিশোধন করে পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ হবে। এই ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট এলাকা এবং পাশের জেলা ঘাটালের বন্যার প্রকোপও কমানো যাবে।’’ জেলা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে খবর, চিহ্নিত জমিগুলি রাজ্য স্তরের আধিকারিকরা দু’দফায় পরিদর্শনও করে গিয়েছেন।
দুই ব্লকেই সেচের কাজে বিপুল পরিমাণে মাটির নীচের জল ব্যবহৃত হয়। মহকুমা কৃষি সেচ দফতরের পরিসংখ্যান বলছে দু’টি ব্লক মিলিয়ে প্রায় ৭০ শতাংশ জমিতে ফসল ফলানোর কাজে ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহৃত হচ্ছে। বৈধ অনুমতি ছাড়া যথেচ্ছ ছোট নলকূপ বসানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে বিকল্প পথের সন্ধান করছে কৃষি সেচ দফতরও। কৃষি সেচ দফতরের(যান্ত্রিক) সহকারী ইঞ্জিনিয়ার পল্লবকুমার দাস বলেন, “গোঘাটে ভূগর্ভস্থ জলস্তরের পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরাও জল ধরে রাখার চিন্তাভাবনা করছি। প্রকল্প তৈরি করে খুব শীঘ্রই জেলা স্তরে পাঠানো হবে।’’
জলস্তর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গোঘাটের বিধায়ক মানস মজুমদারও। গঙ্গা থেকে জল এনে এলাকায় সরবরাহের পরিকল্পনা চলছে বলে জানান তিনি। তাঁর কথায়, “গোঘাট থেকে গঙ্গার দুরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। ভূগর্ভস্থ জল না তুলে, গঙ্গা থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহ হলে সঙ্কট কমবে। সেই পরিকল্পনাই চলছে।’’ কবে বাস্তবায়িত হবে পরিকল্পনা? তিনি বলেন, ‘‘গত বছর নভেম্বরে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রী মলয় ঘটকের কাছে গোঘাটের দু’টি
ব্লকের সংকটের কথা জানিয়ে এলাকায় গঙ্গার জল সরবারাহের প্রস্তাব পাঠিয়েছি। জেলা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর থেকে পরিদর্শনও হয়েছে। তাঁদের রিপোর্টের ভিত্তিতে রাজ্য স্তর থেকে খুব শীঘ্রই পরিদর্শনে আসার কথা।’’