চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর মণ্ডপ।—নিজস্ব চিত্র।
আলো আছে, উৎসব আছে, আয়োজন আছে, কিন্তু জনসমাগম নেই। করোনাকালে কার্যত ‘নির্জন’ সপ্তমী কাটাল চন্দননগর। এমন বেমানান ছবি শেষ কবে দেখা গিয়েছে তা স্মরণ করতে পারছেন না কোনও পুজো উদ্যোক্তাই।
দুর্গাপুজো মিটলেই সাজতে শুরু করে চন্দননগর। সেখানে তখন জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রস্তুতি। এ বারও তাই বিধিবদ্ধ ছিল। কিন্তু বাধ সেধেছে করোনা। সপ্তমীর রাত ঘুরে সেই ছবিই দেখা গেল চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর বিভিন্ন মণ্ডপে।
নতুনপাড়ার বাসিন্দা মিঠুন চক্রবর্তী চেয়ারে বসে এক মনে মোবাইল ঘাঁটছিলেন। মণ্ডপে কেউ ঠাকুর দেখতে ঢুকছেন কি না সে দিকে নজরই নেই। অথচ প্রতিবার তাঁর ডিউটি থাকে ভিড় নিয়ন্ত্রণের। মণ্ডপে এক সঙ্গে অনেকের প্রবেশ আটকাতে মাঝে মাঝে গেট আটকাতে হয়। গত বারও প্রায় সারা রাত এই কাজই করতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু এ বার যেন তার প্রয়োজনই পড়ছে না। শুধু মিঠুন নন, থিমের মণ্ডপে শিল্পীর নাম কী, কী দিয়ে তৈরি মণ্ডপ তা দর্শকদের জানাতে অনর্গল প্রচারের দায়িত্ব থাকে যাঁর কাঁধে তিনিও চুপ।
আরও পড়ুন: গলসিতে বিজেপি কর্মীদের মারধর, অভিযোগ ওড়াল তৃণমূল
মানকুন্ডু স্টেশন রোডে প্রতি বছর মানুষের ঢল নামে ষষ্ঠী থেকেই। এ বার সপ্তমীর দিন অনেককে দেখা গেল দল বেঁধে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছেন। কিন্তু জ্যোতির মোড়, সার্কাস মাঠ, নতুনপাড়া, বেশোহাটা বা দৈবকপাড়া সব পুজোতেই এত দিনের সেই চেনা ছবিটা উধাও। পালপাড়া রোডে বিবিরহাট উত্তরাঞ্চল থেকে শুরু করে পালপাড়া হেলাপুকুর, বিদ্যালঙ্কা সর্বত্রই একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি। কোভিড-১৯ যেন সব উৎসবকেই নতুন করে ভাবতে শিখিয়ে দিয়েছে।
ঠাকুর দেখা।—নিজস্ব চিত্র।
অন্যান্য জায়গায় সাধারণত নবমীর দিন জগদ্ধাত্রী পুজো হলেও, চন্দননগরের মেজাজটাই আলাদা। সপ্তমী থেকে শুরু করে দশমী পর্যন্ত ৪ দিন ধরে চলে পুজো। এ বার সেখানে দশমীর শোভাযাত্রা নেই। নবমীর রাতেই পুজো শেষ। অন্যান্যবার জগদ্ধাত্রী পুজোয় আলোর খেলা শহর জুড়ে। কিন্তু এ বার চন্দননগরের সেই ট্রেডমার্ক আলোও যেন ম্রিয়মান। আলোর জাদু এ বার হাতে গোনা।
অন্যান্য বার সারা রাত ধরে ঠাকুর দেখা, বাইরে খাওয়া। এ বার এ সব ভাবতেই পারছেন না পাদ্রীপাড়ার বাসিন্দা কলেজ ছাত্র অভিষেক দাস। ‘‘চন্দননগর স্ট্র্যান্ডে বসে বন্ধুদের সঙ্গেই আড্ডা দিয়ে সপ্তমীটা কাটিয়ে দিলাম’’, হতাশা চেপে রেখেই বললেন অভিষেক।