পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়, আটকে পড়া পর্যটক।
আমি এখন সিনিয়র সিটিজেন। কিন্তু বেড়ানোর নেশা তরুণ বয়স থেকেই। প্রধান নেশা পাহাড়। ঘোরার জন্য একটা দলও রয়েছে আমাদের। এ বার শ্রীরামপুরের সাতজন মিলে বেরিয়েছিলাম।
গত শুক্রবার বিকেলে আমরা হিমাচলপ্রদেশের কেলাংয়ে পৌঁছই। লাদাখ-লে হাইওয়ের ধারে একটা হোটেলে উঠি। জায়গাটা কেলাংয়ে ঢোকার মাত্র দুই কিলোমিটার আগে। শনিবার সকাল থেকে তুষারপাত শুরু হল। ক্রমে চারদিক যেন সাদা চাদরে ঢেকে যেতে লাগল। এক নাগাড়ে ৪৮ ঘণ্টা বরফ পড়ল।
রাস্তার উপরে পুরু বরফ জমে। গাড়ি চলার উপায় নেই। বেরোব কি করে? হোটেলেই অষ্টপ্রহর কাটছে। মুশকিল হচ্ছে, বরফের জন্য বিদ্যুৎ বন্ধ। জেনারেটর দিয়ে কাজ চলছিল। কিন্তু ডিজেল শেষ। সন্ধ্যা নামলেই ঘুটঘুটে অন্ধকার। সোমবার সন্ধ্যায় এক ঘণ্টার জন্য জেনারাটের চালানো হয়েছিল। তাতে মোবাইলে চার্জটা দিতে পেরেছি। তাই বাড়িতে যোগাযোগটা করতে পারছি। যদিও ইন্টারনেট সংযোগ নেই। হোটেলের জলের লাইন বরফে জমে গিয়েছে। জল বন্ধ। আমাদের সঙ্গে থাকা জলও প্রায় শেষ। খাবারও। সোমবার রাতে বাঁধাকপি সেদ্ধ করে নুন-কাঁচালঙ্কা দিয়ে খেয়েছি। আজ দুপুরে ছাতু গুলে চালিয়ে দেব। রাতেও হয়ে যাবে। কিন্তু কাল থেকে কী করব?
সবাই সুস্থ আছি। এখন তুষারপাত বন্ধ। আজ আকাশ পরিষ্কার। সরকার উদ্যোগী হয়ে মেশিন দিয়ে বরফ কেটে রাস্তা সাফ না কাটলে বেরনোর উপায় নেই। যা শুনছি, তাতে হয়তো আরও দু’দিন বেরনো যাবে না। সেনাবাহিনী আসবে, এমন খবরও নেই।
গত ৪২ বছর ধরে কত জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছি। কিন্তু এমন অভিজ্ঞতা আগে হয়নি। ভাবছি কতক্ষণে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাব।
(পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়, আটকে পড়া পর্যটক)