সাজাপ্রাপ্ত: রথীন পাল ও শুভাশিস ঘোষ ওরফে বাচ্চু। নিজস্ব চিত্র
হিন্দমোটরের রাধাগোবিন্দনগরে যুবতীকে ধর্ষণ-খুনের মামলায় পড়শি শুভাশিস ঘোষ ওরফে বাচ্চুকে যাবজ্জীবন সাজার নির্দেশ দিল আদালত। তথ্য লোপাটের দায়ে প্রাক্তন সিপিএম কাউন্সিলর রথীন পালের ৫ বছর কারাদণ্ড হয়েছে। মঙ্গলবার শ্রীরামপুরের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক কল্লোল চট্টোপাধ্যায় ওই সাজার নির্দেশ দেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, নিহত ওই যুবতী সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে চাকরি করতেন। রাধাগোবিন্দনগরে আবাসনে থাকতেন তিনি। পাশেই বাচ্চুর ভাড়াবাড়ি। ২০১৪ সালের ৪ জুলাই দুপুরে আবাসনের নীচে সাইবার কাফেতে যান ওই যুবতী। পরে আবাসনের পিছন দিকে গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে পাওয়া যায়। বাচ্চু সেখানেই ছিল। সে দাবি করে, ওই যুবতী ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছেন। স্থানীয় নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হলে ঘণ্টা খানেকের মধ্যে যুবতী মারা যান। সিপিএম নেতা রথীন, বাচ্চুর সঙ্গে নার্সিংহোমে এসে ঘটনাটিকে লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করেন।
১৬ জুলাই উত্তরপাড়া থানায় এফআইআর করেন ওই যুবতীর মা। তাঁর অভিযোগ ছিল, রথীনবাবুর হুমকিতে তিনি প্রথমে এফআইআর করতে পারেননি। অভিযোগের ভিত্তিতে বাচ্চু-রথীনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলার সরকারি আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায় জানান, ময়না তদন্ত-সহ অন্যান্য পরীক্ষায় ধর্ষণ-খুনের প্রমাণ মেলে। তিনি বলেন, ‘‘বাচ্চু মেয়েটিকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলে। রথীনবাবু প্রভাব খাটিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। পুরো ব্যাপারটাই আদালতে প্রমাণিত হয়।’’ সোমবার বিচারক সেই প্রমাণের জন্য দু’জনকে দোষী সাব্যস্ত করেন।
এ দিন বাচ্চু আদালতে সাজা মকুবের আর্জি জানায়। বলতে থাকে, তাকে ফাঁসানো হয়েছে। তার বৃদ্ধা মা, স্ত্রী, দু’টি মেয়ে রয়েছে। তাঁদের কথা যেন ভাবা হয়। বাচ্চুর মা-মেয়েও এজলাসে উঠে কান্নাকাটি জুড়ে দেন। রথীন বিচারককে বলেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। তবে আদালতের প্রতি তিনি আস্থাশীল। রায় মাথা পেতে নেবেন। খুনের অভিযোগে বাচ্চুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি দেন বিচারক। সঙ্গে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১০ মাস কারাবাসের নির্দেশ দেন। ধর্ষণের দায়ে ১০ বছর কারাদণ্ড, ২৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১০ মাস কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়। আর প্রমাণ লোপাটের দায়ে ৫ বছর কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে দু’মাস কারাবাসের সাজা দেন বিচারক।
প্রমাণ লোপাটের দায়ে রথীনবাবুকে ৫ বছর কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৫ মাস আরও কারাদণ্ডের সাজা দেন বিচারক। ভীতি প্রদর্শনের দায়ে ২ বছর কারাবাস, ২ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ২ মাস কারাবাসের নির্দেশ হয়।
আদালত থেকে বেরনোর পরেই দুই সাজাপ্রাপ্তের পরিবারের মহিলারা সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের উপর কার্যত ঝাঁপিয়ে পড়েন। তেড়ে যাওয়া, ক্যামেরা ভাঙার চেষ্টা, গালিগালাজ, হুমকি— কিছুই বাদ রাখেননি তাঁরা। বাচ্চু ইট কুড়িয়ে সাংবাদিকদের মারার চেষ্টা করে। পুলিশকর্মীরা অবশ্য পরিস্থিতি সামাল দেন। রথীনবাবুর মেয়ে বলতে থাকেন, ‘‘তৃণমূল পার্টি চক্রান্ত করে এই কাজ করল।’’ ধরা পড়ার সময় রথীনের শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের নেতা-কর্মীরা। এ দিনও দলের অনেকেই আদালত চত্ত্বরে এসেছিলেন।
এ বিষয়ে উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান, তৃণমূল নেতা দিলীপ যাদবের প্রতিক্রিয়া, ‘‘দোষ করলে সাজা হবেই। সিপিএম নেতা বলে কেউ কী ছাড় পেতে পারেন! এর সঙ্গে রাজনীতির ব্যাপার নেই।’’ তবে নিহতের বাবা-মা জানান, সাজায় তাঁরা সন্তুষ্ট নয়। ওই যুবতীর মা বলেন, ‘‘বাচ্চুর চরম সাজার আবেদন জানাব।’’