তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে লক্ষাধিক টাকার গাছ কাটার অভিযোগ ঘিরে শোরগোল পড়েছিল জগৎবল্লভপুরের শঙ্করহাটিতে। প্রধানের সমর্থনে ময়দানে নামায় সমালোচনায় বিদ্ধ হতে হয় পঞ্চায়েত সমিতিকে। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, বন দফতর ওই ঘটনায় কোনও তদন্ত এখনও করেনি। অভিযোগ, হেলদোল নেই পূর্ত দফতরেরও। অথচ, ওই দফতরের জমিতেই ছিল কেটে নেওয়া গাছগুলি।
শঙ্করহাটি ১ পঞ্চায়েতের শঙ্করহাটিতে পূর্ত দফতরের জমি থেকে লক্ষাধিক টাকার পাকুড়, অশ্বত্থ এবং দেবদারু গাছ কেটে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর একাংশের। অভিযোগের তির ছিল তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের প্রধান সুমিত্রা পণ্ডিতের দিকে। খবরটি আনন্দবাজারে প্রকাশিত হতেই শোরগোল পড়ে। আসরে নামে তৃণমূল-শাসিত জগৎবল্লভপুর পঞ্চায়েত সমিতি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, তাঁরা বন দফতর এবং পূর্ত দফতরের কাছে গাছ কাটার অভিযোগ করেছিলেন। যদিও বন দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, কোনও অভিযোগ তাঁরা পাননি। দফতরের হাওড়া সদরের রেঞ্জ অফিসার সমীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুক্তি, ‘‘যাদের জমির উপরে ওই গাছগুলি ছিল, সেই পূর্ত দফতরকেই অভিযোগ করতে হবে। তারা অভিযোগ না করায় তদন্ত করছি না।’’ পূর্ত দফতরের হাওড়া ডিভিশন সূত্রে জানানো হয়েছে, গ্রামবাসীদের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ দিকে, সমিতির বন ও ভূমি সংস্কার স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ তনুজা বেগমের দাবি, তিনটি নয়, কাটা হয়েছিল দু’টি গাছ। প্রধান নিজে গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেননি। শৌচাগার তৈরির জন্য জমি ফাঁকা করতে তিনি গাছ দু’টি কাটার অনুমতি চেয়েছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির থেকে। সমিতি অনুমতি দিলে তিনি গাছ দু’টি কাটেন।
প্রশ্ন ওঠে, পূর্ত দফতরের জমিতে গাছ কাটার অনুমতি পঞ্চায়েত সমিতি দেয় কী করে। তনুজাদেবীর দাবি, ‘‘প্রয়োজনে সমিতির বন ও ভূমি সংস্কার স্থায়ী সমিতি সেই অনুমতি দিতে পারে।’’ সে ক্ষেত্রে বন দফতরের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন কি নেই? পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির উত্তর, ‘‘অনুমতি নিতে গেলে অনেক ঝামেলা। আমাদের তাড়া ছিল। পরে বন দফতরের অনুমতি নিয়ে নেবে পঞ্চায়েত সমিতি।’’ সঙ্গে যোগ করেন: ‘‘গাছগুলি রাখা আছে। বিক্রি করে পাওয়া অর্থ সমিতির তহবিলে জমা হবে।’’ কিন্তু পূর্ত দফতরের জমি থেকে কাটা গাছ সমিতি বিক্রি করবে কী ভাবে? তনুজাদেবীর মন্তব্য, ‘‘এত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না। বিভিন্ন অঞ্চলের প্রধান লক্ষ লক্ষ টাকার গাছ বেআইনি ভাবে কেটে বিক্রি করছে। সেগুলি দেখুন। মাত্র দু’টো গাছ নিয়ে কেন পড়ে আছেন!’’
বন দফতরের হাওড়া সদর রেঞ্জ অফিস সূত্রে জানানো হয়েছে, যেই গাছ কাটুন না কেন, বন দফতরের থেকে আগাম অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। আগে গাছ কেটে পরে অনুমতি নেওয়ার কোনও সংস্থান বন দফতরের আইনে নেই।