আমতার একটি কারখানার ভিতরে জলে ডুবেছে যন্ত্রপাতি।
টানা বৃষ্টি ও বন্যায় চাষের ক্ষতি তো হয়েছেই, গ্রামীণ হাওড়ায় শিল্পেও ধাক্কা লেগেছে।
উলুবেড়িয়ার শিল্পতালুক থেকে শুরু করে আমতা, বাগনান সর্বত্র কারখানার ভিতরে জল জমে যাওয়ায় বা রাস্তা ডুবে গিয়ে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। অনেক কারখানাতেই এখনও কাজ শুরু হয়নি। ফলে, গত কয়েক দিনে সব মিলিয়ে ক্ষতি হয়েছে বহু কোটি টাকার। এ নিয়ে উলুবেড়িয়া শিল্পতালুকের কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রাজ্য শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগমের চাপান-উতোরও শুরু হয়েছে।
ওই শিল্পতালুকে অন্তত ৫০টি ছোট-বড় কারখানা চলে। গত সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে শিল্পতালুকের ভিতরের রাস্তায় জল জমে যায়। অনেক কারখানার ভিতরেও জল ঢোকে। আটের দশকের মাঝামাঝি বীরশিবপুরে ১৬১ একর জমিতে শিল্পতালুকটি গড়ে তোলে রাজ্য শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগম। সেই সময় এখানে জমি লিজ নিয়ে প্রায় ৭০টি কারখানা গড়ে ওঠে। বর্তমানে চালু আছে ৫০টির মতো কারখানা। নিগমই এখানে রাস্তাঘাট তৈরি করেছে। সেই রাস্তা গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ডুবে যায়। কারখানা থেকে উৎপাদিত পণ্য বাইরে আনা বা কাঁচামাল ভিতরে ঢোকানোর জন্য শিল্পতালুকে প্রতিদিন কয়েকশো ট্রাক চলে। কিন্তু বৃষ্টিতে রাস্তায় জল জমে যাওয়ায় ট্রাকগুলি ঢুকতে-বেরোতে পারেনি। ফলে, পণ্য উৎপাদন হয়ে পড়ে থাকলেও তা বিক্রির জন্য বের করতে পারেননি কারখানা-মালিকেরা। একই কারণে ভিতরে আসতে পারেনি কাঁচামালও।
শিল্পতালুকে জলের ট্যাঙ্ক তৈরির একটি কারখানার কর্তৃপক্ষ জানান, তাঁরা যে সব পণ্য উৎপাদন করেছিলেন, তা বিক্রির জন্য ডিলাদের কাছে পাঠাতে পারেননি। ফলে, তাঁদের অন্তত ২৫ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে। একই দশা অন্য কারখানাগুলিরও। এখানে যে সব কারখানা আছে, তার মালিকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে সব মিলিয়ে এই শিল্পতালুকে কারখানাগুলির ক্ষতির পরিমাণ গড়ে অন্তত দশ শতাংশ। শুধু তাই নয়, খারাপ রাস্তার জন্য অনেক শ্রমিকও কাজে আসতে পারেননি। তার ফলেও উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।
জলমগ্ন উলুবেড়িয়ার একটি কারখানা চত্বর।
গোটা পরিস্থিতির জন্য কারখানা-মালিকদের পক্ষ থেকে শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগমকেই দায়ী করা হয়েছে। তাঁদের সংগঠনের কর্তারা জানান, এখানে জল নিকাশি ব্যবস্থা অপ্রতুল। যতটুকু ব্যবস্থা ছিল তা-ও সংস্কারের অভাবে কার্যত নষ্ট হয়ে গিয়েছে। জল বেরোতে না পারায় তা রাস্তায় জমে যায়। কারখানা মালিকদের অভিযোগ, পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য তাঁরা নিগমকে নিয়মিত সার্ভিস চার্জ দেন। কিন্তু কোনও পরিষেবা পান না।
শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগম আবার এই অবস্থার জন্য কারখানা মালিকদেরই দায়ী করেছে। নিগমের আধিকারিকদের অভিযোগ, শিল্পতালুকে গাড়ি ঢোকানোর নিয়ম নেই। মুম্বই রোডের ধারে আলাদা পার্কিং-এর ব্যবস্থা আছে। কিন্তু সেখানে ট্রাক না রেখে কারখানা মালিকেরা বেআইনি ভাবে শিল্পতালুকে ট্রাক ঢুকিয়ে রাস্তাঘাট এবং নিকাশি ব্যবস্থাকে নষ্ট করে ফেলেছেন।
আমতার শেরপুরে উলুবেড়িয়া-আমতা রোডের ধারের একাধিক কারখানাতেও দুর্যোগের জন্য একই পরিস্থিতি হয়। বৃষ্টি এবং ডাকাতিয়া খালের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় আমতা-১ ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় কার্যত বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। শেরপুরে একটি কাগজ এবং প্যাকেজিং কারখানা চলে গিয়েছে জলের তলায়। বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার ডুবে গিয়েছে। একই হাল যন্ত্রপাতির। ফলে, গত ৪ অগস্ট থেকে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ। ফলে, অন্তত ৫০০ শ্রমিকের কাজও সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কয়েক কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। কারখানার তরফে অভিজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘প্রকৃতির উপরে কিছু করার নেই। পরিস্থিতির উন্নতি হলেই আমরা কারখানা খুলে দেব।’’
বাগনানে মুম্বই রোডের ধারে প্লাস্টিক থেকে তুলো তৈরির একটি কারখানার ভিতরেও জল ঢুকে যাওয়ায় কয়েকদিন উৎপাদন বন্ধ থাকে। এই কারখানার উৎপাদন অবশ্য চালু করার চেষ্টা হচ্ছে। একই হাল দেখা গিয়েছে আরও কিছু কারখানার ক্ষেত্রেও।
ছবি: সুব্রত জানা।