এই রঙিন মাছের চাষ হচ্ছে বাড়ির চৌবাচ্চায়। নিজস্ব চিত্র
রঙিন মাছের চাষে আগেই দিশা দেখিয়েছিল হাওড়া শহরতলির বালি, ডোমজুড় ও দাশনগর। গত দু’বছরে জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের মৎস্যচাষিদের মধ্যেও রঙিন মাছ চাষের প্রবণতা বেড়েছে। আগে হাওড়ার রঙিন মাছ কেবল দেশের অন্যান্য রাজ্যে পাঠানো হত। মৎস্য দফতর সূত্রের খবর, এখন সেই সমস্ত রঙিন মাছ তাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়ার মতো বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের নীল বিপ্লব প্রকল্পের আওতায় রঙিন মাছ চাষের জন্য সরকারি তরফে মৎস্যচাষিদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বছর দু’য়েক ধরে। মৎস্য দফতরের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, সরকারি সাহায্য চালু হওয়ায় গ্রামের বেকার ছেলেদের মধ্যেও রঙিন মাছ চাষে উৎসাহ বেড়েছে। গত দু’বছরে হাওড়ার ব্লকে ব্লকে রঙিন মাছ চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। হাওড়ার গ্রামীণ এলাকায় গত এক বছরে সব থেকে বেশি রঙিন মাছ চাষ শুরু করেছেন উলুবেড়িয়া এক নম্বর ব্লকের চাষিরা। ওই ব্লকের বিডিও কার্তিক রায়ের কথায়, ‘‘গত এক বছরে আমার ব্লকে প্রায় এক হাজার চাষি রঙিন মাছ চাষ শুরু করেছেন। এই মাছ চাষে লাভ দেখেই সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে।’’
দাশনগরের বাসিন্দা রবিন ময়ূর প্রায় কুড়ি বছর ধরে বিভিন্ন প্রজাতির রঙিন মাছের চাষ করছেন নিজের বাড়িতে চৌবাচ্চা তৈরি করে। তাঁর কথায়, ‘‘গত দু’-তিন বছরে আমাদের এখান থেকেই মাছের চারা নিয়ে যাচ্ছেন হাওড়ার প্রত্যন্ত গ্রামের চাষিরা। জেলা জুড়েই এই মাছের চাষ বেড়েছে। তাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, বাংলাদেশে আমাদের চাষ করা মাছ রফতানি হয়।’’ উলুবেড়়িয়া এক নম্বর ব্লকের বাসিন্দা রাজু মণ্ডল ও তাঁর ভাই নব পেশায় মাছচাষি। তাঁরা হাওড়ার দাশনগর, ডোমজুড় থেকে রঙিন মাছের চারা এনে নিজেদের চাষ করেন। রাজুর কথায়, ‘‘গত এক বছর ধরে রঙিন মাছের চাষ করছি। ১৮ হাজার টাকায় প্রায় এক লক্ষ রঙিন মাছের চারা কিনে চার মাস পরে তা প্রায় চার লক্ষ টাকায় বিক্রি করেছি। চাষের খরচ বাদ দিয়েও হাতে রয়েছে দু’লক্ষ টাকা।’’
হাওড়া জেলায় মাছচাষিরা যে ভাবে রঙিন মাছ চাষের দিকে ঝুঁকছেন, তাতে উচ্ছ্বসিত মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ। তাঁর কথায়, ‘‘এ বার সারা রাজ্যের বিভিন্ন ব্লকে রঙিন মাছ চাষে উৎসাহ বা়ড়াতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর ফলে অনেক বেকার ছেলেমেয়ে উপকৃত হবেন।’’ উলুবেড়িয়া এক নম্বর ব্লকে কর্মরত মৎস্য সম্প্রসারণ আধিকারিক নারায়ণ বাগ বলেন, ‘‘গত এক বছরে রঙিন মাছ চাষে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। অনেক মাছচাষি প্রশিক্ষণের জন্য নিয়মিত ব্লকে আসছেন। আমরা ব্লকের প্রশিক্ষিত মাছচাষিদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি।’’
হাওড়া জেলায় রাজ্যের মৎস্য চাষি উন্নয়ন সংস্থার মুখ্য নির্বাহী আধিকারিক সলিল বিশ্বাস বলেন, ‘‘রঙিন মাছ চাষে উৎসাহ বাড়াতে সরকারি তরফে চাষের খরচের ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দেওয়া হয়।’’