Farmers

বিক্রি হবে কোথায়? বাড়তি ধান নিয়ে বিপাকে চাষিরা

বার বাজারের চেয়ে বেশি দামে ধান কিনছে সরকার। সরকারি সহায়ক-মূল্য কুইন্টালপ্রতি ১৮৬৮ টাকা।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২০ ০৬:০৫
Share:

—ফাইল চিত্র

সরকারি শিবিরে ধান বিক্রি করতে গিয়ে নিজস্ব একক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট না-থাকায় এ বার বিপাকে পড়ছেন অনেক চাষি। তার সঙ্গে তাঁদের চিন্তা বাড়িয়েছে সরকার চাষিপিছু ধান কেনার পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ায়। বাড়তি ধান কোথায় বিক্রি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না চাষিরা।

Advertisement

এ বার বাজারের চেয়ে বেশি দামে ধান কিনছে সরকার। সরকারি সহায়ক-মূল্য কুইন্টালপ্রতি ১৮৬৮ টাকা। সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে ধান বিক্রি করলে উৎসাহ-ভাতা হিসেবে আরও ২০ টাকা বেশি পাচ্ছেন চাষিরা। বর্তমানে খোলা বাজারে কুইন্টালপ্রতি চাষিরা দাম পাচ্ছেন ১৪০০-১৪৫০ টাকা। প্রায় ৫০০ টাকার তফাত হওয়ায় এ বার শিবিরে ধান বিক্রি করতেই চাষিরা বেশি উৎসাহী।

প্রাথমিক ভাবে সরকারের তরফে প্রত্যেক চাষির থেকে ৯ টন করে ধান কেনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন সেই পরিমাণ কমিয়ে অর্ধেক করা হয়েছে। অর্থাৎ, সাড়ে ৪ টন করে ধান কেনা হচ্ছে। এতেই চিন্তার ভাঁজ বেড়েছে চাষিদের। কেউ ২০ বিঘা, কেউ ৪৫ বিঘা জমিতে ধান ফলিয়েছিলেন। ফলে, বাড়তি ধান নিয়ে কী করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না তাঁরা।

Advertisement

তারকেশ্বরের মোজপুর গ্রামের চাষি জয়দেব ঘোষের খেদ, ‘‘আমরা তিন ভাইয়ে মিলে ৪৫ বিঘে জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। কিন্তু ক্যাম্পে বলছে বাড়তি ধান নেবে না। এই ধান নিয়ে এখন কী কবর? সমস্যায় পড়ে গেলাম। ধান বিক্রির টাকা দিয়েই প্রতিবার আলু চাষ করি। আমার চিকিৎসার জন্য চেন্নাই যাওয়ারও কথা ছিল। সব আটকে গেল ধান বিক্রি না হওয়ায়।’’

তারকেশ্বর, ধনেখালি-সহ হুগলির বিস্তীর্ণ এলাকার একটা বড় অংশের চাষিরাই হচ্ছেন ভাগচাষি। যাঁরা অন্যের জমিতে চাষ করেন। ধনেখালির কানানদী অঞ্চলের এমনই এক ভাগচাষি বলেন, ‘‘সরকারি ক্যাম্প ধান না কিনলে, সেই তো আমাকে ফড়েদের ধান বেচতে হবে কম দামে। তা হলে এইসব ক্যাম্প করে কী লাভ?’’

খাদ্য সরবরাহ দফতরের দাবি, বাড়তি ধানের সমস্যা অনেকটাই মিটে যাবে পরবর্তী শিবিরগুলিতে। আপাতত সাড়ে চার টন করে ধান কেনা হচ্ছে। যাতে সব ধরনের চাষি শিবিরে ধান বিক্রি করতে পারেন। এরপর ফের সরকারি ভাবে ধান কেনার শিবির করা হবে। সে ক্ষেত্রে বাড়তি ধান বিক্রির সুযোগ রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে এ বার হুগলিতে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ৪ লক্ষ ১৫ হাজার টন।

প্রতিবারই সরকারি শিবিরে ধান বেচতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়েন চাষিরা। এ বার নিজস্ব একক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট না-থাকা এবং বাড়তি ধান নিয়ে চাষিরা যেমন সমস্যায় পড়েছেন, তেমনই একটি চেনা সমস্যাও হাজির। অনেকেরই অভিযোগ, চালকল-মালিকদের মর্জিমাফিক বিভিন্ন শিবিরে প্রতি ১০০ কেজি ধান ওজনের পরে ৬-৮ কেজি বাদ দেওয়া হচ্ছে। তারকেশ্বরের মোজপুরের চাষি উজ্জ্বল ঘোষের প্রশ্ন, ‘‘এ ভাবে কেন ধান বাদ যাবে? একে তো ধান ভিজে থাকলে তা মাপার ব্যবস্থা নেই। পাঁচ কেজি পর্যন্ত বাদ দেওয়া যেতে পারে। এক শ্রেণির চালকল-মালিক তার চেয়েও বাড়তি ধান নিয়ে নিচ্ছেন। এটা ঠিক নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement