প্রতীকী ছবি।
‘জুজু’র নাম এনপিআর-এনআরসি।
গ্রামীণ হাওড়ায় গ্রাহকদের সাবেক পুরনো মিটার পাল্টে নতুন ইলেকট্রনিক মিটার বসাতে উদ্যোগী হয়েছে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। সে জন্য মাইকে প্রচার!
শুক্রবারই বাগনানে দেখা গেল, প্রচারে বলা হচ্ছে— ‘নতুন মিটার বসানোর জন্য বণ্টন সংস্থার কর্মীরা প্রত্যেকের বাড়িতে যাবেন। গ্রাহকেরা যেন প্রয়োজনীয় নথি দিয়ে তাঁদের সঙ্গে সহযোগিতা করেন’।
শুধু বাগনান নয়, গত কয়েক দিন ধরে এমন প্রচার দেখা যাচ্ছে উলুবেড়িয়া, আমতা, জগৎবল্লভপুর, উদয়নারায়ণপুর-সহ প্রায় সর্বত্র। অথচ, মাসচারেক আগে বণ্টন সংস্থা যখন ওই কাজ শুরু করেছিল, তখন এমন প্রচারের প্রয়োজন হয়নি। এখন হচ্ছে। সে কথা মানছেনও বণ্টন সংস্থার এক কর্তা। তিনি বলেন, ‘‘এর আগে বণ্টন সংস্থার কোনও কর্মসূচি রূপায়ণ করতে গিয়ে এ ভাবে মাইক প্রচার করতে হয়নি। এখন হচ্ছে যাতে ভুল বোঝাবুঝির সম্ভাবনা না-থাকে। যাতে কর্মীরা সহজেই নতুন মিটার বসাতে পারেন। নতুন মিটার বসালে গ্রাহকদেরই সুবিধা।’’
কিসের ভুল বোঝাবুঝি?
এই প্রশ্নেই আসছে জাতীয় জনগণনা পঞ্জি (এনপিআর) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) প্রসঙ্গ। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) পরে কেন্দ্র এনআরসি-এনপিআর চালু করতে পারে, এই আশঙ্কা রয়েছে বিরোধী দলগুলির। এ নিয়ে দেশ জুড়ে প্রতিবাদও চলছে। এ রাজ্যে এনপিআর-এনআরসি চালু করা যাবে না বলে ইতিমধ্যেই ঘোষণা করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কাগজ আমরা দেখাব না’— এই স্লোগানও নানা মুখে, নানা স্তরে ঘুরছে। এই আবহে মাসখানেক আগে গ্রামীণ হাওড়ার কয়েক জায়গায় নতুন মিটার বসাতে গিয়ে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কর্মীরা গ্রাহকদের কাগজ দেখতে চাওয়ায় গোলমাল হয়। তারপরেই সেই কর্মসূচিতে ভাটা পড়ে।
ওই সংস্থার কর্তারা মনে করছেন, ইলেকট্রনিক মিটার বসানোর জন্য কর্মীদের বাড়ি বাড়ি যেতে হবে। ফের তাঁদের এনপিআর বা এনআরসি-সমীক্ষক ভেবে ভুল বুঝতে পারেন গ্রাহকেরা। ফের গোলমাল হতে পারে। সেই আশঙ্কায় নতুন মিটার বসানোর কাজে কর্মীদের অনেকেই যেতে রাজি হচ্ছেন না। ফলে, বহু গ্রাহক এখনও নতুন মিটার পাননি। অথচ, এ জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে কোনও বাড়তি টাকা নেওয়া হবে না।
ঝিমিয়ে পড়া সেই কর্মসূচিতেই এখন গতি আনতে চাইছে বণ্টন সংস্থা। তবে, ‘জুজু’র ভয় কাটিয়ে।