ফাইল চিত্র
করোনা আবহে এ বার পুজো বোনাসের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন বাস মালিকেরা। যে সামান্য বোনাস জুটেছে, তা থেকেও তৃণমূল প্রভাবিত মহকুমা বাস কর্মচারী সংগঠন টাকা কেটে নিচ্ছে বলে অভিযোগ বাস শ্রমিকদের। এ নিয়ে আরামবাগের ১৬/২০ রুটের বাসকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়েছে। তাঁদের দাবি, সংগঠনের মাধ্যমে না-দিয়ে সরাসরি তাঁদের হাতেই বোনাসের টাকা তুলে দিন বাস মালিকেরা। অন্য দিকে, বাসকর্মী সংগঠনের কর্তাদের দাবি, তহবিল মজবুত করতে শুধু বকেয়া চাঁদাই তাঁরা শ্রমিকদের বোনাস থেকে কেটে নিয়েছেন। এতে অন্যায়ের কিছু নেই বলেই তাঁদের দাবি।
ওই রুটের বাস মালিক সংগঠনের সভাপতি প্রবীর অধিকারী বলেন, “দীর্ঘদিনের রীতি মেনে আমরা বাস পিছু চার জন কর্মীর বোনাস তাঁদের সংগঠনের কাছে দিয়ে দিয়েছি। কবে, কোন কর্মী, কোথায় ডিউটি করছেন, তারাই সেই নথি রাখে। সংগঠন বোনাস কী ভাবে বণ্টন করেছে, আমাদের তা জানা নেই।’’ বাস শ্রমিকদের দাবি সম্পর্কে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘বোনাস দেওয়ার চালু ব্যবস্থা থেকে সরে যাওয়ারও কোনও কথা হয়নি।” বাসমালিক সংগঠন সূত্রে জানা যায়, বাস পিছু চার জন কর্মীর বোনাস গত বার দেওয়া হয়েছিল ৬,৬০০ টাকা। এ বার আলোচনা সাপেক্ষে তা কমিয়ে ৪,৭০০ টাকা করা হয়েছে। সেই হিসাব মতো ইতিমধ্যেই ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা বাসকর্মীদের সংগঠনকে দেওয়া হয়েছে। অল্প কিছু টাকা বাকি আছে। সেটাও খুব শীঘ্র দেওয়া হবে। এ ছাড়াও লকডাউন চলাকালীন কর্মীদের মাথা পিছু ৭০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
এ দিকে, বাস কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, লকডাউনে ৬-৭ মাস বাস চলেনি। ফলে, প্রতিটি পরিবারে অনটন দেখা দিয়েছে। বাস মালিক সংগঠনও বোনাসের পরিমাণ গত বারের চেয়ে অনেক কমিয়েছে। এই অবস্থায় কর্মচারী সংগঠন মাথা পিছু সদস্য চাঁদা বাবদ সারা বছরের ৩৬০ টাকা করে কেটে নিচ্ছে। কর্মীদের দাবি ছিল, যে ৬-৭ মাস বাস চলেনি, সেই সময়ের চাঁদা মকুব করুক সংগঠন। এক বাস কর্মী জানান, চালক ১ হাজার, কন্ডাক্টর ৮০০ এবং হেল্পার ৬০০ টাকা করে বোনাস পাচ্ছেন। তা থেকেও যদি ৩৬০ টাকা করে কেটে নেওয়া হয়, তবে তাঁদের হাতে কী থাকবে! এই সামান্য টাকায় কীই বা হবে!
বাস শ্রমিকদের অভিযোগ নিয়ে ‘আরামবাগ মহকুমা বাস ড্রাইভার্স অ্যান্ড হেল্পার্স ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর সম্পাদক সফিকুল ইসলাম বলেন, “অন্য কোনও টাকা কাটছি না। সংগঠনের সদস্যদের মাসিক চাঁদা হিসাবে ৩০ টাকা করে কেটে নেওয়া হচ্ছে। এক বছরের চাঁদা বাকি থাকলে ৩৬০ টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “শ্রমিকদের বিপদে আপদে পাশে থাকতেই এই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। লকডাউনে শ্রমিকদের সহায়তা করতে গিয়ে সংগঠনের তহবিল ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। ফের তহবিল মজবুত না-করলে শ্রমিকদের পাশে সংগঠন দাঁড়াবে কী করে! কর্মীদের মেয়ের বিয়ে হলে সংগঠন ৬ হাজার টাকা দেয়। পরিবারের কোনও সদস্যের মৃত্যু হলে ৩ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এমনকী, অসুখ-বিসুখ এবং দুর্ঘটনা ঘটলেও সংগঠন সহায়তা করে়।” সেই কল্যাণমূলক কাজকর্ম যাতে চালু রাখা যায়, সেই লক্ষ্যেই সংগঠনের তহবিল মজবুত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সংগঠনের কর্তারা।