কলুষিত: জঞ্জালের পাহাড় থেকে সর্বক্ষণই বেরোচ্ছে ধোঁয়া। ছবি: তাপস ঘোষ
পুরাণ অনুযায়ী, রাবণের চিতা নেভে না। সেই দশাই যেন হয়েছে চন্দননগর ভাগাড়ের!
জঞ্জালের পাহাড় থেকে দিনরাত সর্বক্ষণই গলগল করে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। তার জেরে ছড়াচ্ছে দূষণ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিষাক্ত ধোঁয়ায় তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। সেই কারণে অবিলম্বে কঠিন বর্জ্য প্রতিস্থাপন প্রকল্প চালুর দাবি করছেন তাঁরা। ভোটের মুখে এই দাবিতে
সরব বিরোধীরাও।
ভাগাড়টি রয়েছে চন্দননগরের কলুপুকুরে। সারা শহরের জঞ্জাল এখানে জমা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বছর খানেক ধরে জঞ্জালে কোনও ভাবে আগুন লেগে ধোঁয়া বের হচ্ছে। তাতে আকাশ ঢেকে যাচ্ছে। আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে যাচ্ছে সেই ধোঁয়া। অভিযোগ, পুরসভার ৮, ৯ এবং ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ মানুষকে এর ফল ভোগ করতে হচ্ছে। ওই সব জায়গার বাসিন্দারা জানান, ধোঁয়ার জন্য অনেকে হাঁপানির সমস্যায় ভুগছেন। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক দফতরে বহুবার জানানো হয়েছে। কিন্তু সমস্যা মেটেনি। পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, ওই ধোঁয়ায় মিশে থাকা বিষাক্ত গ্যাস মানুষের ফুসফুসে ঢুকে বিপত্তি ঘটায়।
সমস্যার কথা পুর কর্তৃপক্ষও মানছেন। তাঁদের অবশ্য দাবি, ওই জমিতে কঠিন বর্জ্য প্রতিস্থাপন প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে। পুর-কমিশনার স্বপন কুণ্ডু জানান, বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরির কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে। খরচ ধরা হচ্ছে ৫০ কোটি টাকারও বেশি। ডিপিআর তৈরি হলেই সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হবে। তাঁর আশ্বাস, ‘‘প্রকল্পটি চালু হলে ভাগাড়ে জমে থাকা আবর্জনা সাফ করে ফেলা হবে। আবর্জনা থেকে সার তৈরি হবে। দূষণ এবং দুর্গন্ধ পুরোপুরি কমে যাবে। পুরসভার ৩৩টি ওয়ার্ডেই বাড়ি বাড়ি আবর্জনা সংগ্রহের কাজ শীঘ্রই চালু করা হবে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর লোকেরা ওই কাজ করবেন।’’
বহু বছর আগে চন্দননগরে নির্দিষ্ট জায়গায় আবর্জনা ফেলার বন্দোবস্ত হয়েছিল। শহরের প্রবীণ মানুষ জানান, স্টেশনের কাছেই ছিল ধাপার মাঠ। পরে বাম আমলে বর্জ্য শোধনের জন্য কলুপুকুরে ‘ভার্মি কম্পোজ়ড’ প্রকল্প চালু হয়। কয়েক বছর আগে উড়ালপুল তৈরির সময় সেটি ভেঙে ফেলা হয়। অভিযোগ, তার পর থেকেই ওই জায়গায় জঞ্জালের পাহাড় হয়ে গিয়েছে।
গোটা রাজ্যে কঠিন বর্জ্য প্রতিস্থাপন প্রকল্প চালুর দাবিতে চন্দননগর পরিবেশ অ্যাকাডেমি নামে একটি সংগঠন দীর্ঘদিন ধরেই সরব। সংগঠনের সদস্যরা জানান, ২০১৪ সাল থেকে এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। ২০১৮ সালে চন্দননগর পুরসভায় এই নিয়ে দাবিপত্র জমা দেওয়া হয়। সংগঠনের কর্ণধার তথা পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চন্দননগরের ভাগাড়ে অগ্নিকুণ্ড তৈরি হয়ে গিয়েছে। ভয়ঙ্কর বায়ুদূষণ হচ্ছে। ধোঁয়ায় থাকা মিথেন গ্যাস মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। প্লাস্টিক পোড়া গ্যাস আরও মারাত্মক। ফুসফুসের নানা সমস্যা, এমনকি, ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। এই সমস্যার একটাই সমাধান। অবিলম্বে কঠিন বর্জ্য প্রতিস্থাপন প্রকল্প গড়ে তোলা হোক। জাতীয় পরিবেশ আদালত আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে সব পুরসভাকে ওই প্রকল্প গড়তে বলেছে। নচেৎ জরিমানা গুনতে হবে।’’
সিপিএমের চন্দননগর উত্তর-দক্ষিণ এরিয়া কমিটির সদস্য হীরালাল সিংহ বলেন, ‘‘তিনটি ওয়ার্ডের হাজার পাঁচেক মানুষ মারাত্মক দূষণের শিকার। অনেকেরই ফুসফুসে সমস্যা হচ্ছে। অবিলম্বে কঠিন বর্জ্য প্রতিস্থাপন প্রকল্প চালু করা হোক। বাম আমলে তৈরি জরুরি প্রকল্পটি তৃণমূল বোর্ড ভেঙে দেয়। ফলে, মানুষের ক্ষতির দায় ওদেরই নিতে হবে।’’