প্রতীকী ছবি
অনেকদিন ধরেই সাঁকরাইলে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব হাওড়া জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের মাথাব্যথার কারণ। এ বার গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছাপ পড়ল উন্নয়মূলক কাজেও। নলপুর পঞ্চায়েতের মনোহরপুরে একটি জলপ্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠান বুধবার দ্বিতীয় দফাতেও ভেস্তে গেল। ফলে, ওই প্রকল্পের জল কবে থেকে মিলবে, তা অনিশ্চিত হয়ে গেল।
মনোহরপুরে বাড়ি বাড়ি পানীয় জল সরবরাহের জন্য প্রায় এক কোটি টাকার জলপ্রকল্পটি গড়েছে কেএমডব্লিউএসএ (কলকাতা মেট্রোপলিটান ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন অথরিটি)। কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। কাজ শেষ হওয়ায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর উদ্বোধনের দিন স্থির হয়। এ ব্যাপারে উদ্যোগী হন বিধায়ক শীতল সর্দার। তিনি কার্ড ছাপেন। প্যান্ডেল বাঁধার কাজও শুরু হয়। কিন্তু দলে তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা বলে পরিচিত সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জয়ন্ত ঘোষের অনুগামীদের বাধায় সেই অনুষ্ঠান ভেস্তে যায় বলে অভিযোগ। তখন জয়ন্তবাবুর অনুগামীদের অভিযোগ ছিল, প্রকল্পটি গড়তে প্রথমে যাঁরা উদ্যোগী হয়েছিলেন, তাঁদের বাদ দিয়ে নিজের পছন্দের লোকজনকে নিয়ে শীতলবাবু এটি উদ্বোধন করতে যাচ্ছিলেন। শীতলবাবু সেই অভিযোগ মানেননি।
বুধবার প্রকল্পটির উদ্বোধনে উদ্যোগী হন জয়ন্তবাবু। গ্রামবাসীরা হাজির হন। প্রকল্পটি ফুল দিয়ে সাজানো হয়। কিন্তু কেএমডব্লিউএসএ-এর তরফে জানানো হয়, উদ্বোধনের ক্ষেত্রে সমস্যা এসেছে। তাই অনুষ্ঠান বাতিল। বিধায়ক নিজে গিয়ে দু’দিন আগে অনুষ্ঠান বাতিলের আবেদন জানান বলে অভিযোগ।
এই পরিস্থিতিতে প্রকল্পটি কবে চালু হবে তা নিয়ে কেএমডব্লিউএসএ-র তরফে কেউ মন্তব্য করতে চাননি। তবে, শাসকদলের দুই গোষ্ঠীর টানাপড়েনে ওই সংস্থার আধিকারিকদের অনেকেই হতাশ। তাঁরা মনে করছেন, দ্রুত প্রকল্পটি চালু না হলে যে সব বাড়িতে পাইপলাইনের সংযোগ দেওয়া হয়েছে, তা খারাপ হয়ে যেতে পারে।
কী বলছেন দু’পক্ষের নেতারা?
বিধায়ক শীতলবাবু এ দিনের অনুষ্ঠানে আপত্তি জানানোর কথা মানেননি। তিনি বলেন, ‘‘বুধবার কোনও উদ্বোধন ছিল কিনা জানা নেই। বাধা দেওয়ারও প্রশ্ন নেই। আগামী ২৫ অক্টোবর এটি উদ্বোধন হচ্ছে। সেখানে থাকব।’’ তবে, শীতলবাবুর অনুগামী বলে পরিচিত নলপুর পঞ্চায়েতের প্রধান বিশ্বনাথ মাখাল বলেন, ‘‘প্রথম বারে জয়ন্তবাবুরা বাধা দিয়েছিলেন। বুধবার তাঁরা আমাদের কিছু না জানিয়ে উদ্বোধনের দিন ঠিক করেন। তাই আমরা কেএমডব্লিউএসএ-কে জানিয়ে দিই অনুষ্ঠান বাতিল করতে হবে।’’
পক্ষান্তরে, জয়ন্তবাবু বলেন, ‘‘যাঁরা প্রকল্পটি গড়তে প্রথমে উদ্যোগী হন, তাঁদের বাদ নিয়ে বিধায়ক নিজের অনুগামীদের নিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করতে চাইছিলেন। গ্রামবাসীরা তা পছন্দ করেননি বলে শুনেছি। বুধবার গ্রামবাসীরাই অনুষ্ঠান করেছেন। আমি তাঁদের হয়ে কেএমডব্লিউএস-একে চিঠি লিখে সুপারিশ করেছিলাম।’’ জয়ন্তবাবুর অনুগামী জয়দেব মণ্ডল অবশ্য বলেন, ‘‘৩০ সেপ্টেম্বর একটি রাস্তার উদ্বোধন থাকায় আমরা জলপ্রকল্পের উদ্বোধনে আপত্তি জানিয়েছিলাম। চক্রান্ত করে বিধায়ক এবং তাঁর গোষ্ঠীর লোকজন বুধবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আটকেছেন।’’ সাধারণ মানুষকে দিয়েই এ দিন প্রকল্প উদ্বোধন হয় বলেও দাবি করেন জয়দেববাবু। কেএমডব্লিউএসএ সে কথা মানেনি।
যাঁদের উদ্যোগে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে অন্যতম তৃণমূল নেতা মহম্মদ সিদ্দিক দলের এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে হতাশ। তিনি জানান, এই পরিস্থিতি অবাঞ্ছিত। বিধায়কের উচিত সব পক্ষকে ডেকে প্রকল্পটি চালু করার ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ করা।