পড়ুয়া ছাড়া আর সবই আছে ঝকঝকে স্কুলে

কমতে কমতে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ার সংখ্যা এখন এসে ঠেকেছে ১৬-য়। অথচ, স্কুলটিতে শিক্ষক আছেন ১১ জন।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৯ ০২:৩৯
Share:

সুনসান: ক্লাস চলছে হাওড়ার পদ্মপুকুর রামকৃষ্ণ বিদ্যামন্দিরে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

তেতলা স্কুলে বড় বড় ঘর আছে।

Advertisement

ঘর জুড়ে আছে টেবিল-চেয়ার, বেঞ্চ, ব্ল্যাকবোর্ড।

নেই শুধু পড়ুয়া। আর এই পড়ুয়ার অভাবে উঠে যেতে বসেছে ৫৬ বছরের পুরনো বাংলা মাধ্যম স্কুল। কমতে কমতে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ার সংখ্যা এখন এসে ঠেকেছে ১৬-য়। অথচ, স্কুলটিতে শিক্ষক আছেন ১১ জন।

Advertisement

এমনই অবস্থা হাওড়ার পদ্মপুকুর রামকৃষ্ণ বিদ্যামন্দিরের। ‘সৌজন্যে’ কোনা এক্সপ্রেসওয়ে। যার সরকারি নাম ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক। স্কুলের শিক্ষক থেকে এলাকার বাসিন্দা সকলের অভিযোগ, আগে যেখানে ঘন জনবসতি ছিল, সেই জায়গায় তৈরি হওয়া ‘দানবাকৃতির’ রাস্তা কার্যত বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে এ পার-ও পারকে। কারণ, বিদ্যাসাগর সেতুর টোল প্লাজার পরে রাস্তা পার হতে গেলে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ক্যারি রোড মোড় পর্যন্ত যেতে হয়। এই অংশটুকুতে কোনও ট্র্যাফিক

সিগন্যাল যেমন নেই, নেই ফুট ওভারব্রিজও। ফলে রাস্তা পেরোতে সমস্যায় পড়েন বিশেষত বয়স্ক মানুষ ও স্কুলপড়ুয়ারা। দুর্ঘটনা লেগে থাকে মাঝেমধ্যেই। পদ্মপুকুর রামকৃষ্ণ বিদ্যামন্দির স্কুলটি যেহেতু কোনা এক্সপ্রেসওয়ে লাগোয়া, তাই সে কারণেই পড়ুয়ার সংখ্যা কমতে কমতে তলানিতে এসে পৌঁছেছে বলে দাবি সেখানকার শিক্ষকদের। এক শিক্ষক জ্যোতিপ্রকাশ ঘোষ বলেন, ‘‘স্কুলটি তৈরি হয়েছিল ১৯৬৩ সালে। এক সময়ে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের ধারে শেখপাড়া বা পদ্মপুকুর এলাকা থেকে প্রচুর ছাত্র আসত। কিন্তু স্কুল লাগোয়া এলাকায় ছোট-বড় দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। ফলে ওই অঞ্চলের লোকজন আর তাঁদের ছেলেদের এই স্কুলে পাঠান না।’’

শেখপাড়ার বাসিন্দা কুসুম শেখ বলেন, ‘‘কোন ভরসায় ছেলেদের ওই স্কুলে পাঠাব বলুন? দিনের কোনও সময়েই কোনা এক্সপ্রেসওয়ে ফাঁকা থাকে না। আকছার ঘটে দুর্ঘটনা। বাধ্য হয়ে ছেলেকে অন্য স্কুলে ভর্তি করেছি।’’

এক্সপ্রেসওয়ে থেকে কয়েক মিটার দূরে সদ্য রং হওয়া তেতলা স্কুলবাড়িতে এক দিন গিয়ে দেখা গেল, স্কুল চললেও পড়ুয়াদের কোলাহল নেই। পাওয়া যাচ্ছে না শিক্ষক-শিক্ষিকাদের গলার আওয়াজ। খাঁ-খাঁ করছে প্রায় সব ক্লাসঘর। একটি ক্লাসে এক জন মাত্র ছাত্রকে পড়াচ্ছেন এক শিক্ষিকা। টিচার-ইন-চার্জ প্রবীর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ছাত্র কমে যাওয়ার কারণগুলির মধ্যে অন্যতম হল কোনা এক্সপ্রেসওয়ে। দুর্ঘটনার ভয়ে ছেলেরা আসে না। অথচ এক সময়ে আমাদের স্কুলে বছরে ৩৫০-৪০০ ছাত্র পড়তে আসত। এখন সেই সংখ্যা ১৬ জনে দাঁড়িয়েছে।’’

প্রবীরবাবু জানান, তাঁরা বহু চেষ্টা করেছেন। শিক্ষা দফতর থেকে শুরু করে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিনিধি— সকলের কাছে স্কুলটিকে বাঁচানোর আবেদন জানিয়েছেন। কোনা এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা থেকে ক্যারি রোডের মধ্যে ফুট ওভারব্রিজ তৈরির জন্য দৌড়াদৌড়ি করেছেন। কিন্তু কিছুই হয়নি। পাড়ায় পাড়ায় মাইকে প্রচার চালিয়ে বা লিফলেট বিলি করেও পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করা যায়নি।

হাওড়া জেলা স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই স্কুলটিতে ছাত্র কমে যাওয়ার জন্য কোনা এক্সপ্রেসওয়ে অনেকটা দায়ী ঠিকই। তবে এর পাশাপাশি অন্য অনেক বাংলা মাধ্যম স্কুলে কম ছাত্র ভর্তি হওয়ার যে কারণ রয়েছে, তা এই স্কুলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অভিভাবকেরা এখন ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে সন্তানদের বেশি পাঠাচ্ছেন। তাই বাংলা মাধ্যমে ছাত্র কমছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement