চাহিদা কম। বসে আছে বিভিন্ন ভ্রমণ সংস্থার বাস।—নিজস্ব চিত্র।
প্রতি বছর ডিসেম্বরে শীতে স্ত্রী, ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়াটা কেন্দ্রীয় সরকারি চাকুরে বরুণ মাইতির রুটিন। কিন্তু এ বছর বাড়ির সবারই মন খারাপ। কারণ বেড়ানোর সেই রুটিনে ছেদ টেনেছে প্রধানমন্ত্রীর নোট-বাতিলের ঘোযণা। যে ভ্রমণ সংস্থার সঙ্গে তিনি যেতেন তাঁরাও পড়েছেন টাকার সমস্যায়। একইভাবে বাইরে গিয়ে খুচরোর অভাবে পাছে হয়রানির একশেষ হয়, তাই বেড়ানোর পরিকল্পনাই বাতিল করেছেন হাওড়ার বাগনানের বাসিন্দা বরুণবাবু।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করেছে। যার জেরে নিত্য ভোগান্তি হচ্ছে মানুষের। দেশজুড়ে চলছে জোরদার প্রতিবাদ-আন্দোলন। ভোগান্তির সেই আঁচ এসে পড়েছে আর সব ব্যবসার মতো পর্যটনেও। বরুণবাবুর মতোই বহু পর্যটক শীতের ভ্রমণ বাতিল করায় বিভিন্ন পর্যটন সংস্থার মাথায় হাত পড়েছে। ভরা মরসুমে এমন অবস্থায় লোকসানের মুখে পড়েছে বিভিন্ন পর্যটন সংস্থা। যদিও লোকসান হবে জেনেও কিছু সংস্থা কম সংখ্যক পর্যটক নিয়ে ভ্রমণে বেরোচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, লোকসান হবে জেনেও যাচ্ছি কারণ ‘গুড উইল’-এর একটা ব্যাপার তো আছেই। ক্ষতি না হয় পরে পুষিয়ে নেওয়া যাবে।
উলুবেড়িয়ার এক ভ্রমণ সংস্থার কর্ণধার গৌরব দে। বছরে খান দশেক ভ্রমণ পরিচালনা করেন। কিন্তু এ বছর মরসুমের শুরুতেই কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কায় তিনি। গৌরববাবু জানান, ডিসেম্বর থেকে মে পর্যন্ত খুব ভাল সময়। এর পর মাস তিনেক মন্দা। তার পরে ফের শুরু হয় মরসুম। ২২ ও ২৫ ডিসেম্বর তাঁর কেরালা ও ভাইজাগ ভ্রমণের আয়োজন পাকা। কিন্তু নোট-কান্ডের জেরে সেগুলো আদৌ ঠিকঠাক ভাবে করা যাবে কি না তা নিয়ে রীতিমত চিন্তায় তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘পর্যটকরা সকলেই প্রায় অর্ধেক টাকা দিয়ে বুকিং করেছেন। কিন্তু এখন টাকা বাতিলের ধাক্কায় বাকি টাকা দিতে পারছেন না। এদিকে যে হোটেল বা বাস বুকিং করা হয়েছিল আমরাও তাঁদের অর্ধেক টাকা দিয়েছি। তাঁরা এখন বাকি টাকা চাইছেন। কিন্তু তা দিতে পারছি না। হাতে মাত্র কয়েক দিন সময়। এর মধ্যে যদি কিছুটা সুরাহা হয় সেই আশায় আছি।
একই দশা ডোমজুড়ের এক ভ্রমণ সংস্থার কর্তা দিব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের। তাঁর সংস্থার ডিসেম্বরের শেষের দিকে কেরালা ও হরিদ্বারে যাওয়ার কথা ছিল। নোট-কাণ্ডের জাঁতাকলে পড়ে ইতিমধ্যেই তিনি কেরল যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। হরিদ্বার নিয়েও চিন্তায় তিনি। জানালেন, অনেকে বুকিং করেছিলেন। এখন যেতে চাইছেন না। আগামী ৮ ডিসেম্বর তাঁর সংস্থা মধ্যপ্রদেশ ভ্রমণের আয়োজন করেছে। ৮ নভেম্বর প্রধামনন্ত্রীর ঘোষণার পর ১২ জন পর্যটক ভ্রমণ বাতিল করেছেন।
জেলা জুড়েই বিভিন্ন ভ্রমণ সংস্থার দাবি, নোট-কাণ্ডের জেরে তাদের ব্যবসায় লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি হচ্ছে। হাওড়া ডিস্ট্রিক্ট ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক স্নেহাশিস পাল বলেন, ‘‘আমাদের জেলায় চল্লিশটির মতো ভ্রমণ সংস্থা রয়েছে। তাদের প্রায় সকলেই লোকসানের আশঙ্কায় ভুগছেন।’’
ভ্রমণ সংস্থাগুলোর এমন আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তার আঁচ মিলেছে কয়েকজন পর্যটকের কথাতেও। উলুবেড়িয়ার জোয়ারগড়ির বাসিন্দা তথা সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর প্রাক্তন কর্মী তরুণ মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রায় প্রতি বছরই এই সময় বাড়ির লোকজনকে নিয়ে বেড়াতে যাই। এবার যাব না। নোট-কাণ্ডে যে অবস্থা তৈরি হয়েছে তাতে কোথায় কি বিপদে পড়তে হয় কে জানে!’’ একই কথা শোনা গিয়েছে পেশায় রাজ্য বিদ্যুৎ সংস্থার কর্মী সুকুমার বসুমল্লিকের গলাতেও। তাঁর কথায়, ‘‘আগে পকেটের খোরাক নিয়ে সমস্যা তো মিটুক। তারপরে না হয় মনের খোরাক নিয়ে ভাবা যাবে।’’