দুঃস্বপ্নের সরণি: চন্দননগরের পাদ্রিপাড়ার এই এলাকাতেই কয়েক দশক আগে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছিল ১২ জন শ্রমিকের।
গত বছরের গোড়ায় উত্তরপ্রদেশের বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছিল মালদহের চার জনের। মৃতদের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল রাজ্য সরকার। তাই এ বার নৈহাটিতে বাজি বিস্ফোরণে মৃত পাঁচ জনের পরিবারের জন্যেও ক্ষতিপূরণের দাবি উঠল।
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইনি আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বর্তমানে ‘চন্দননগর পরিবেশ অ্যাকাডেমি’ নামে একটি পরিবেশ সংস্থা চালান। ওই সংস্থার পক্ষ থেকে শনিবার রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, পরিবেশ সচিব এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সচিবের কাছে ওই দাবি জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়। বিশ্বজিৎবাবুর অভিযোগ, ‘‘পরিবেশ আদালতের (গ্রিন ট্রাইবুনাল) নির্দেশ অমান্য করে রাজ্য সরকার বাজির কারিগরদের জন্য ‘ক্লাস্টার’ (বাজি তৈরির উপযুক্ত জায়গা) তৈরি করেনি। অথচ, হুগলি, দুই ২৪ পরগনা এবং হাওড়ার বহু প্রান্তিক মানুষের বাজি তৈরিই জীবিকা। বাজি তৈরি করতে গিয়ে বিস্ফোরণে তাঁরা প্রাণও হারান। তাই এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের দায়িত্ব নেওয়া উচিত।’’ একই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ভিন্ রাজ্যে মৃত শ্রমিকদের পরিবারকে যদি সরকারি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়, তখন নৈহাটির ক্ষেত্রেই বা হবে না কেন?’’
সরকারি সূত্রের দাবি, শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই চিঠি স্বরাষ্ট্র সচিবের দফতরে পৌঁছয়নি। পরিবেশ সচিব প্রভাতকুমার মিশ্র বলেন, ‘‘আমরা মূলত পরিবেশের উপরে বাজির প্রভাব নিয়ে কাজ করি। বাজি কারবারিদের জন্য গ্রিন ট্রাইবুনালের যে সব নির্দেশিকা আছে তার প্রয়োগ শিল্প দফতরের দেখার কথা।’’ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সদস্য সচিব রাজীব কুমার বলেন, ‘‘আমাদের একটি দল শনিবার নৈহাটিতে গিয়েছিল। কোন পরিস্থিতিতে কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তাঁরা তদন্ত করছেন। ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই বিষয়ে কোনও প্রস্তাব এলে সেটা অন্য দফতরের দেখার বিষয়।’’
পরিবেশ অ্যাকাডেমির দাবি, পরিবেশ আদালতের নির্দেশ রয়েছে, কোনও নির্জন জায়গায় বাজি তৈরি করতে হবে। সেখানে আগুন প্রতিরোধের যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে। বাজির ব্যবসাকে বৈধ্যতা দিতে কারিগরদের লাইসেন্স দিতে হবে পুরসভা বা পঞ্চায়েতের তরফ থেকে। কিন্তু এ রাজ্যে কিছুই হয়নি। রাজ্যে বাজি কারবারে যুক্ত শ্রমিকদের শ্রম দফতরের আওতায় আনার দাবিও তুলেছে অ্যাকাডেমি।