শম্পার বাড়ির সামনে পোঁতা হয়েছে গাছ। নিজস্ব চিত্র
আমপানে হরিপাল গ্রামীণ হাসপাতালের ভেঙে পড়া কিছু গাছ বেআইনি ভাবে কেটে বিক্রির অভিযোগকে ঘিরে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। সংশ্লিষ্ট আশুতোষ পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগে সরব হয়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দা, হুগলি জেলা পরিষদের সদস্য শম্পা দাস। এ জন্য তাঁকে নানা ভাবে হেনস্থা এবং ভয় দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
হাসপাতালের গায়েই তাঁর বাপেরবাড়ি। যাতায়াতের পথ হাসপাতালের মধ্যে দিয়েই। বৃহস্পতিবার সেই বাড়ির গেটের সামনে গাছ পুঁতে যাতায়াতে ব্যাঘাত সৃষ্টিরও অভিযোগ তুললেন শম্পা। বাপের বাড়ির উল্টো দিকেই তাঁর শ্বশুরবাড়ি। তাঁর অভিযোগ, শুক্রবার সকালে মুখে গামছা বেঁধে কিছু মানুষ তাঁর শ্বশুরবাড়ির সামনে চড়াও হয়। ভয়ে এ দিন তাঁদের পরিবারের সবাইকে গৃহবন্দি থাকতে হয়েছে বলে শম্পার দাবি। তাঁর স্বামী মনোজিৎ জানিয়েছেন, ডাকযোগে তিনি হরিপালথানায় অভিযোগ করেছেন।
জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার তথাগত বসু জানিয়েছেন, পুলিশ ঘটনার উপর নজর রাখছে। পুলিশের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে জানা গিয়েছে, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জমিতে গাছ পোঁতা হয়েছে। তবে ওই মহিলা ও তাঁর পরিবার যাতে আক্রান্ত না হন, সে জন্য এ দিন সকালে পুলিশ যায়।
দলীয় নেত্রীর এই হেনস্থা নিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘হরিপালের ঘটনা নিয়ে আমি রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছি। শম্পার সঙ্গেও কথা হয়েছে। দলেরই এক বিধায়ক ও প্রধানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দল নজর রাখছে।’’
পক্ষান্তরে, আশুতোষ পঞ্চায়েতের প্রধান সুমিত সরকারের দাবি, ‘‘আমি কোনও বেআইনি কাজ করিনি। স্পট-টেন্ডার করে গাছ বিক্রি করেছি। কারও বাড়ির যাতায়াতের পথে গাছ পুঁতিনি। বর্ষা এসে গিয়েছে। ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের কর্মীদের দিয়ে বনসৃজন করিয়েছি। জেলা পরিষদের সদস্যার বাড়িতে কেউ হামলাও করেনি।’’
সমস্যার কথা জানাতে বৃহস্পতিবার শম্পা স্বামীকে নিয়ে নবান্নে যান। দলের জেলা সভাপতি এবং জেলার দলীয় পর্যবেক্ষক ফিরহাদ হাকিমকেও লিখিত ভাবে জানান। দুপুরে ফিরে শম্পা দেখেন, বাপেরবাড়ি যাওরা রাস্তার দু’ধারে শ’খানেক গাছ পোঁতা হয়েছে। তাঁর বাপের বাড়ির গেটের সামনেও গাছ বসেছে।
শম্পা বলেন, ‘‘এ ভাবে কেন হেনস্থা করা হচ্ছে বুঝতে পারছি না। দলের জেলা সভাপতি ভরসা দিয়েছেন। যারা হামলা করতে আসছে, তাদের ভুল বোঝানো হচ্ছে। হাসপাতাল তৈরিতে আমার পরিবার চার বিঘা জমি দান করেছিল। আমার বাবা-দাদুরা নিজের হাতে হাসপাতালে গাছ পুঁতেছিলেন। সেই গাছ বিক্রির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করতে হবে।’’
প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর, শুক্রবারও ওই গাছ বিক্রির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা পড়েনি। জেলা বন দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘বন-আইনে স্পট-টেন্ডার বলে কোনও শব্দ নেই। সরকারি জায়গায় গাছ পড়ে গেলে প্রথমে বন দফতরকে খবর দিতে হবে। বন দফতরের অফিসারেরা গিয়ে গাছের মূল্য নির্ধারণ করবে। তারপর টেন্ডারে যিনি সর্বোচ্চ মূল্য দেবেন, তাঁকেই গাছ বিক্রি করতে হবে। সেই টাকা অনলাইনে সরকারি কোষাগারে জমা পড়বে। এর বাইরে কিছু হলে তা বিধিসম্মত নয়।’’
বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা হওয়ায় শুক্রবার হরিপালের বিএমওএইচ কৌস্তভ ঘোষ বন দফতরের কর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন।
বিজেপির আরামবাগ জেলার সাংগঠনিক সভাপতি বিমান ঘোষ বলেন, ‘‘এখন তৃণমূলের মুষলপর্ব চলছে। ওঁরা দলেরই মহিলা নেত্রীকেও ছাড়ছেন না।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘দলের জেলা পরিষদের সদস্যার যদি এই হাল হয়, তা হলে সাধারণ মানুষ এদের আমলে কোন অতলে দাঁড়িয়ে?’’