এই বাস থেকেই উদ্ধার হয় চালকের দেহ।
বাসের ভিতর থেকে উদ্ধার হল এক ব্যক্তির দেহ। সোমবার সকালে শেখ মহরম আলি (৩৬) নামে ওই ব্যক্তির দেহ উদ্ধার হয় চুঁচুড়া বাসস্ট্যান্ডের পাশে রাস্তায় রাখা চুঁচুড়া-বাগখাল রুটের ওই বাস থেকে। মহরম ওই বাসেরই চালক ছিলেন।
পুলিশ জানিয়েছে, মহরমের গলায় দড়ির ফাঁস ছিল। দেহটি রাখা ছিল যাত্রীদের বসার একটি আসনে। দড়ির অপরপ্রান্ত বাঁধা ছিল উপরের একটি রডে। তাঁর নাক-মুখ থেকে প্রচুর রক্তপাত হয়েছিল। খাগরাজোল মসজিদগলি এলাকার বাসিন্দা মহরম রবিবার সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। তারপর আর ফেরেননি। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, মহরমকে খুন করা হয়েছে। দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মহরম বহু বছর ধরে বাস চালকের কাজ করেন। করোনা-পরিস্থিতির জেরে দীর্ঘদিন বাস বন্ধ থাকায় তাঁর সংসারে অভাব দেখা দেয়। লকডাউন উঠে যাওয়ার পরে বাসটি চুঁচুড়া থেকে বাগখালের পরিবর্তে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত চলত। বাসমালিক দেবব্রত ভৌমিকের মন্তব্য, ‘‘মৃত্যুর কারণ বুঝতে পারছি না। লকডাউনের সময় বাসটি চলেনি। পুলিশ সেটি নিজেদের কাজে ব্যবহার করত।’’
বাড়ি ফিরতে না-পারলে বাসের মধ্যেই রাত কাটাতেন মহরম। গত ১৯ অগস্ট কয়েকজন পুলিশকর্মী ওই বাসে কলকাতা গিয়েছিলেন। বৃহস্পতি ও শুক্রবার লকডাউন থাকায় বাসটি রাখা ছিল স্ট্যান্ডে। রবিবার সকাল ১০টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন মহরম। স্ত্রী ও মেয়েকে বলে গিয়েছিলেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরবেন। রাতেও বাড়ি না-ফেরায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেন তাঁর পরিবারের লোকজন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন সকালে দেখা যায়, বাসটির সামনের দিকের যাত্রী আসনে বসে রয়েছেন এক ব্যক্তি। পাশেই ঝুলছে একটি দড়ি। কয়েকজন বাসের দরজা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখেন, যাত্রী আসনে বসে থাকা ব্যক্তির গলায় দড়ির ফাঁস লাগানো। দড়িটি বাঁধা যাত্রীদের ধরার রডের হাতলে। ওই ব্যক্তির নাক-মুখ দিয়ে প্রচুর রক্ত বেরিয়েছে। কয়েকজন বাসকর্মী এসে দেহটি মহরমের বলে শনাক্ত করেন। পুলিশ দেহ চুঁচুড়া হাসপাতালে নিয়ে যায়।
মহরমের স্ত্রী আনোয়ারি বিবির অভিযোগ, ‘‘যে ভাবে দেহটা রাখা ছিল, তাতেই পরিষ্কার, এটি আত্মহত্যা নয়। অতিরিক্ত মারধর করায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তারপর গলায় ফাঁস দিয়ে বাসের আসনে দেহটি রাখা হয়েছিল। সঠিক তদন্ত হলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে। দোষীদের শাস্তি দেওয়া উচিত।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কোনও দিন কোনও ঝামেলার মধ্যে থাকতেন না উনি। শত্রু বলে কেউ ছিল না।
চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘দেহের ময়না-তদন্ত হবে। রিপোর্ট এলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে। সবদিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’