বিদ্যুতের দাবিতে বিক্ষোভ মাহেশে। ছবি: প্রকাশ পাল
পেরিয়ে গিয়েছে দু’দিন। কিন্তু আমপানের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত হুগলির নানা জায়গার পরিস্থিতি শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত স্বাভাবিক হয়নি। আলো আসেনি। জল সরবরাহ শুরু হয়নি। রাস্তায় ভেঙে পড়া গাছও সরেনি। বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের দাবিতে এ দিন রাস্তাতে নামলেন সাধারণ মানুষ। অবরোধ তুলতে নাকাল হল পুলিশ।
উত্তরপাড়ার দোলতলা এবং শিবতলায় অবরোধ হয়। অবরোধকারীদের অভিযোগ, বিদ্যুতের অভাবে আলো-পাখা, জলের পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থারও সমস্যা হচ্ছে। কারণ, ফোনে চার্জ দেওয়া যাচ্ছে না। উত্তরপাড়ার বাসিন্দা রেবতীমোহন দত্ত বলেন, ‘‘তিন দিন ধরে বিদ্যুতের তারের উপরে গাছ পড়ে। বিদ্যুৎ নেই, জল নেই। দুর্বিষহ অবস্থা। সংশ্লিষ্ট দফতরে জানিয়েও লাভ হয়নি।’’ পুরপ্রধান দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘সমস্যা সমাধানে সব তৎপরতা শুরু হয়েছে।’’
শ্রীরামপুরের মাহেশে কাঠগোলা বাস স্টপের সামনে জিটি রোডের ধারে একটি বটগাছ বিদ্যুতের তারে ছিঁড়ে পড়ে। তাতে সংলগ্ন এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সিইএসসি-র কর্মীরা চেষ্টা করলেও বিদ্যুৎ আসেনি। শুক্রবার বেলা ১২টা পর্যন্ত সিইএসসি কাজ শুরু না করায় স্থানীয় বাসিন্দাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটে। ওই সময় সিইএসসি-র গাড়ি বটতলার দিকে যাচ্ছিল। ক্ষুব্ধ জনতা গাড়িটি আটকে অবরোধ শুরু করেন। বটগাছের কাটা ডাল রাস্তায় ফেলা হয়। জনতার দাবি ছিল, আগে ওই জায়গায় কাজ আরম্ভ করতে হবে। বিক্ষোভের খবরে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। সিইএসসি-র আধিকারিকও পৌঁছন। বিদ্যুতের কাজ শুরু হয়। এ সবের মধ্যেই পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের বচসা হয়। হাতাহাতির উপক্রম হয়।
মৃত- ৪
গাছ উপড়েছে- ৭০ হাজার
বিদ্যুৎস্তম্ভ উপড়েছে- ৩২০০ টি
সকাল ৮টা থেকে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা বৈদ্যবাটী কোয়ার্টারের সামনে জিটি রোড অবরোধ হয়। এখানেও সিইএসসি-র দু’টি গাড়ি আটকানো হয়। বৈদ্যবাটীর ১১ নম্বর রেলগেটের কাছেও ওই সড়ক অবরোধ হয় বেলা ১২টা নাগাদ। পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে জনতাকে সরাতে গেলে দু’পক্ষের বচসা হয়। ব্যান্ডেলের সাহাগঞ্জেও জিটি রোড অবরোধ হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সাহাগঞ্জ রথতলায় ঝড়ে টিনের শেড আটকানোর লোহার বিম উড়ে তারের উপর পড়ে ঝুলতে থাকে। বিদ্যুৎ দফতরে বিষয়টি জানালেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সেই কারণে সকাল ১০টা নাগাদ চুঁচুড়া-ত্রিবেণী রোড অবরোধ হয়। ঘণ্টাদু’য়েক পরে পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ ওঠে। স্থানীয় বাসিন্দা অরিন্দম দত্ত বলেন, ‘‘লোডশেডিংয়ে নাজেহাল হতে হচ্ছে। তার উপরে তারের উপর লোহার বিম যে ভাবে ঝুলছে, তাতে বড় বিপদ হতে পারে।’’ বিদ্যুৎ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীরা জরুরি ভিত্তিতে কাজ করছেন। তবে বিরাট এলাকা জুড়ে সমস্যা হওয়ায় দেরি হচ্ছে।’’
চন্দননগর কমিশনারেটের এসিপি (ট্রাফিক) তমাল সরকার বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ ও জলের দাবিতে ছ’টি জায়গায় অবরোধ হয়। সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পুলিশি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।’’
আরামবাগ মহকুমার বিস্তীর্ণ অংশ শুক্রবারেও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। বিদ্যুৎ সংযোগের দাবিতে ক্ষোভ-বিক্ষোভ, বিদ্যুৎ দফতরের গাড়ি আটনোর ঘটনা ঘটছে। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার আরামবাগ ডিভিশনের এক কর্তা বলেন, “হাইটেনশন লাইন সারানোর কাজ হয়ে গিয়েছে। লো-টেনশন লাইনের প্রায় সাড়ে তিনশো খুঁটি ভেঙে বা উপড়ে গিয়েছে। দ্রুত মেরামত চলছে। স্থানীয় মানুষের সহযোগিতা পেলে শনিবারের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব আশা করছি।”