বাঁ দিকে: nতৃণমূল নেতা শেখর দলুইয়ের পাকা বাড়ি (উপরে)। ডান দিকে: হরিরামপুর এলাকার বাসিন্দা মামনি ধাড়ার জীর্ণ বাড়ি। —নিজস্ব িচত্র
ফুটিফাটা মাটির দেওয়াল। উড়ে যাওয়া অ্যাসবেসটসের শূন্যস্থান পূরণ করেছে ত্রিপল।
ত্রিপলে বৃষ্টি আটকালেও মামনি ধাড়ার চোখের জলকে আগলে রাখতে পারেনি। ক্ষোভ, দুঃখ কান্না হয়ে বেরিয়ে আসে। নিজেকে সামলে গ্রাম্য বধূ বলেন, ‘‘আমপানে একদিকের দেওয়াল প্রায় ধসে গিয়েছে। অ্যাসবেসটস উড়ে গিয়েছে। নেতারা কাগজপত্র নিলেন, বাড়ির ছবি তুললেন। কিন্তু ক্ষতিপূরণ পেলাম না। ক্ষতিপূরণ যা এসেছে, বড়লোকেদের বাড়িতে।’’ মামনির বাড়ি হুগলির জাঙ্গিপাড়া ব্লকের হরিরামপুর গ্রামে। তিনি এবং তাঁর স্বামী খেতমজুরি করেন। বাড়িতে পাঁচ বছরের মেয়ে।
তাঁর মতো অনেকেই ক্ষুব্ধ। তাঁদের অভিযোগ, শাসক দলের কিছু লোক ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে’ ক্ষতিপূরণের টাকা ইচ্ছেমতো পাইয়ে দিয়েছেন। নেতা বা তাঁর আত্মীয়, ঘনিষ্ঠ বা প্রভাবশালী লোক ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। যদিও তাঁদের একতলা, দোতলা বা তিনতলা পাকা বাড়ি অক্ষত। যাঁদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা, তাঁরা পাননি। সম্প্রতি এই নিয়ে গণস্বাক্ষর সংবলিত অভিযোগ জমা পড়েছে জেলাশাসকের দফতরে।
লক্ষ্মীকান্ত বাগ নামে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘মাটির বাড়িতে থাকি। আমপানে ভেঙে গেল। বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে থাকতে তো হবে! তাই ধারদেনা করে সারিয়ে নিয়েছি। ক্ষতিপূরণ পাইনি। পেয়েছে বড়লোকেরা।’’ পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়ায় কেউ কেউ টাকা ফেরত দিয়েছেন। তবে সেই সংখ্যা নগণ্য বলে অভিযোগ।
মামনিদের গ্রামেই কোতলপুর অঞ্চল যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি শেখর দলুইয়ের দোতলা পাকা বাড়ি। পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, তাঁর স্ত্রী সুষমা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। বিষয়টি স্বীকার করে শেখর বলেন, ‘‘যে পরিমাণ টাকা পেয়েছি, ততটা ক্ষতি হয়নি। টাকা ফেরত দিয়ে দেব।’’ মোহনবাটি বুথের যুব তৃণমূল সভাপতি অভিজিৎ কুণ্ডু বলেন, ‘‘টাকা ফেরতের জন্য ব্যাঙ্কে গিয়েছিলাম। লিঙ্ক না থাকায় দিতে পারিনি। দিয়ে দেব।’’ আর এক তৃণমূল নেতা লালচাঁদ আলি মল্লিকও ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন বলে অভিযোগ।
পঞ্চায়েত প্রধান গণেশ মালিক বলেন, ‘‘যারা ক্ষতিপূরণের উপযুক্ত নন, তাঁদের টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে।’’
বিজেপির শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শ্যামল বসু বলেন, ‘‘শুধু টাকা ফেরত দিলেই হবে! কেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? কেন দুর্নীতির মাথারা ছাড় পেয়ে যাবেন?’’
তৃণমূলের একাংশও প্রশ্ন তুলছেন। জাঙ্গিপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য শেখ মহিউদ্দিন বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে স্থানীয় সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়— সকলেই অনিয়মের ব্যাপারে কড়া বার্তা দিচ্ছেন। কিন্তু নিচুতলার কিছু নেতার জন্য দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।’’
জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদবের প্রতিক্রিয়া, ‘‘কোথাও ভুল হলে শুধরে নেওয়া হবে। প্রকৃত কেউ ক্ষতিপূরণ না পেয়ে থাকলে, আবেদনের ভিত্তিতে তাঁদের দেওয়া হবে। আমাদের দলের কেউ অনিয়মে যুক্ত থাকলে সাংগঠনিক ভাবে অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের তরফে নির্দেশ এলে অভিযোগের তদন্ত করা হবে।