নেটের খোঁজে বৈদ্যবাটীর গঙ্গার ঘাটে। ছবি: কেদারনাথ ঘোষ
জৈষ্ঠ্যের সাঁঝবেলায় গঙ্গার পাড়ে যেন শত জোনাকির মেলা!
কোন্নগর থেকে বৈদ্যবাটী— ঘাটে ঘাটে জ্বলছে অজস্র মোবাইল। ‘‘নেট মিলছে, নেট’’— উল্লাস শোনা যাচ্ছে সমস্বরে!
তেলেনিপাড়ার গোলমালের জেরে গুজব রুখতে গত বৃহস্পতিবার থেকে শ্রীরামপুর ও চন্দননগর মহকুমায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু লকডাউনের বাজারে নেট-বুভুক্ষু তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতীরা যাবেন কোথায়! কী ভাবে হবে ‘চ্যাট’? ‘টিক-টক’ হারিয়ে যাবে? হোয়াটস্অ্যাপ আদান-প্রদান? গোপন কথাও গোপনে রয়ে যাবে?
এ সব জল্পনার মধ্যেই নেটের খোঁজ মিলল গঙ্গার ধারে। ও পার থেকে মিলছে সংযোগ। ব্যস্। শুধুমাত্র দুপুরে্র খর রোদকে কোনও মতে পাশ কাটানোর অপেক্ষা। সন্ধে নামলেই ক’দিন ধরে দুই মহকুমার গঙ্গাঘেঁষা শহরগুলির ১৭ থেকে ৩৭ ভিড় জমাচ্ছেন গঙ্গাপাড়ে। রাত পর্যন্ত সেখানে বসেই নেট-দুনিয়া চষে ফেলছেন তাঁরা।
কোন্নগর বারোমন্দির সংলগ্ন ঘাটে, শ্রীরামপুরের ভ্রাতৃ সঙ্ঘ মাঠের কাছে, কলেজ ঘাটে, বৈদ্যবাটীতে গঙ্গার পাড়ে গেলেই ভিড়ের দেখা মিলছে। সেই ভিড়ে থাকা মাহেশের এক যুবক বলেন, ‘‘লকডাউনে কাজকর্ম নেই। মোবাইল ঘেঁটেই সময় কাটছিল। কিন্তু নেট বন্ধ হওয়ায় চোখে অন্ধকার দেখেছিলাম। এখন বেশ লাগছে। ও পার থেকে নেটের সংযোগ পাচ্ছি। সঙ্গে গঙ্গার হাওয়া।’’
আর এক তরুণ রোজ আসছেন মোবাইলে ‘গেম’ খেলতে। তাঁর কথায়, ‘‘চার্জ শেষ হয়ে গেলে বাড়ি যাই। চার্জ দিয়ে আবার আসি।’’ এক তরুণীর কথায়, ‘‘কলেজ বন্ধ। সারাক্ষণ বাড়িতে বসে কার ভাল লাগে! তাই বন্ধুদের সঙ্গে গঙ্গার ধারে চলে যাচ্ছি। গেম, টিকটক, হোয়াটসঅ্যাপ সবই হচ্ছে। ফেসবুকও করছি।’’
কোথাও কোনও গোলমাল নেই। সকলেরই মোবাইলে মাথা হেঁট। যেন এক অন্য উৎসব! কিন্তু খাকি উর্দির লোকজন কি ছাড় দেবেন? লকডাউন তো চলছেই। তাই মাঝেমধ্যে ঢুঁ মারছে পুলিশ ভ্যান। তখন অবশ্য পিঠটান দিচ্ছেন নেটপ্রেমীরা। পরে ফের ভরে উঠছে ঘাট। জমছে ‘চোর-পুলিশ’ খেলাও।
চন্দননগর কমিশনারেটের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা তো মোবাইল ছাড়া থাকতেই পারেন না। ওঁদের সতর্ক করা হচ্ছে। সরিয়েও দেওয়া হচ্ছে।’’
অনেকেই বলছেন, এখন অফিস-কাছারি, স্কুলের পড়া-সহ নানা কাজ অনলাইনে হচ্ছে। নেট বন্ধ হওয়ায় তাঁদের অসুবিধা হচ্ছে। তবে, গঙ্গার পাড়ে তাঁদের ভিড় নেই। তাঁরা বাড়িতেই অপেক্ষায় রয়েছেন।
গঙ্গার ধারে ‘গুপ্তধন’ পেয়েছে জেন ওয়াই।