বেপরোয়া: উত্তর প্রসাদপুরে প্রতিমা নিরঞ্জনে ভিড়। নিজস্ব চিত্র
হাইকোর্টের নির্দেশকে উপেক্ষা করে উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের চণ্ডীপুর পঞ্চায়েতের উত্তর প্রসাদপুর গ্রামে দামোদরের ধারে দশমীতে বিসর্জনের সময়ে কার্যত ‘মেলা’ হল। শত শত গ্রামবাসী জড়ো হলেন। খাবারের দোকান বসল। পুলিশের দেখা মিলল না।
ওই গ্রামে আগে পুকুরে ভাসান হত। দামোদরে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের জন্য গত বছরেই বিশেষ ঘাট তৈরি করেছে পঞ্চায়েত। বিসর্জনের পরে ঘাট থেকে কাঠামো তুলে আনার ব্যবস্থাও করে পঞ্চায়েত। এ বারেও একই ভাবে প্রতিমা নিরঞ্জনের ব্যবস্থা হয়। কিন্তু করোনা আবহের কথা মাথায় রেখে যে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা দরকার ছিল তা পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ করেননি বলে অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসীর একাংশই। ফলে, ভিড় ছিল লাগামছাড়া। এতে সরকারের নজরদারির গাফিলতির অভিযোগও উঠেছে। ওইদিন বিকেল পাঁচটা থেকে বিসর্জন শুরু হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে ন’টি প্রতিমা প্রায় একই সময়ে এসে পৌঁছয়। প্রতিটি পুজো কমিটির সঙ্গে গ্রামবাসীরা আসেন। এলাকা মেলার চেহারা নেয়। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা হয়নি। বেশিরভাগ মানুষ মাস্কও পরেননি। হাইকোর্টের নির্দেশ বলছে, প্রতিমা বিসর্জনে ভিড় করা যাবে না। কোনও শোভাযাত্রা হবে না। পুজো কমিটির সীমিত সংখ্যক সদস্য বিসর্জন করবেন। কিন্তু সেই নির্দেশ চৌপাট হয়ে গেল এখানে। দাঁড়িয়ে থেকে পঞ্চায়েত কর্তারা এবং তৃণমূল নেতারা তা দেখলেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ এবং তৃণমূলের নেতারা স্বীকার করেছেন, কিছুটা বেনিয়ম হয়েছে। তাঁরা এর দায় চাপিয়েছেন সাধারণ মানুষের ঘাড়েই। পঞ্চায়েত কর্তাদের দাবি, তাঁরা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনেই বিসর্জনের ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু গ্রামবাসীরা দলে দলে হাজির হয়ে যান। ফলে, তাঁদের কিছু করার ছিল না। একই কথা জানান তৃণমূল নেতারাও।পঞ্চায়েত প্রধান রেজাউল মোল্লা বলেন, ‘‘আমরা ভাবতে পারিনি এত মানুষ এসে যাবেন। আসলে বিসর্জনের সময়ে একটা আবেগ কাজ করে। তার ফলেই এই জমায়েত হয়েছে। আমরা পঞ্চায়েতের তরফ থেকে মানুষকে মাস্ক এবং স্যানিটাইজ়ার দিয়েছি। যাতে সংক্রমণের আশঙ্কা না থাকে।’’ প্রায় একই সুর তৃণমূল নেতা দুলাল করেরও, ‘‘হাইকোর্টের রায় মেনেই কমিটিগুলিকে বলেছিলাম, সীমিত সংখ্যক মানুষ এনে প্রতিমা নিরঞ্জন করতে। কিন্তু বহু গ্রামবাসী হাজির হয়ে যান বিসর্জন দেখতে। আমরা যথাসাধ্য সবাইকে মাস্ক পরিয়েছি, স্যানিটাইজ়ার দিয়েছি।’’
বিডিও কার্তিকচন্দ্র রায় বলেন, ‘‘হাইকোর্টের রায় মেনে এবং কোভিড পরিস্থিতির কথা মনে রেখে নিরঞ্জনের ব্যবস্থা আদৌ করা হয়েছিল কিনা সে বিষয়ে প্রধানের সঙ্গে কথা বলব।’’ পুলিশ মানছে, এত বড় ঘটনা তাদের নজর এড়িয়ে গিয়েছে। হাওড়া জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের এক কর্তা জানান, ওটা প্রত্যন্ত এলাকা। ফলে, ওখানে যে বড় করে নিরঞ্জন হতে পারে, এই আন্দাজ পুলিশের কাছে ছিল না। কেউ কোনও খবরও দেয়নি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।