হাওড়া মর্গ

লাশের গন্ধে নাক চেপে পালিয়ে বাঁচলেন কর্তারা

আয়োজন ছিল প্রচুর। গোটা এলাকা জুড়ে তৈরি হয়েছিল প্যান্ডেল। চার দিক সাজানো হয়েছিল ফুল দিয়ে। সকাল থেকে ছড়ানো হয় বোতলের পর বোতল সুগন্ধী। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হল না। লুকনো গেল না পুরনো মর্গে জমে থাকা লাশের গন্ধ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০০:২৮
Share:

আয়োজন ছিল প্রচুর। গোটা এলাকা জুড়ে তৈরি হয়েছিল প্যান্ডেল। চার দিক সাজানো হয়েছিল ফুল দিয়ে। সকাল থেকে ছড়ানো হয় বোতলের পর বোতল সুগন্ধী। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হল না। লুকনো গেল না পুরনো মর্গে জমে থাকা লাশের গন্ধ। তাতেই অতিষ্ট হয়ে তড়িঘড়ি নতুন মর্গের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষ করে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল হাওড়ার পুলিশ প্রশাসন।

Advertisement

নতুন মর্গ উদ্বোধনের জন্য পরিবেশ দূষণের তোয়াক্কা না করেই পুরনো মর্গে জমে থাকা সাড়ে ৩০০ লাশ তড়িঘড়ি গণদাহ করার পরিকল্পনা করেছিল হাওড়া পুরসভা। শুক্রবার গভীর রাত থেকে সেই কাজ শুরু হলেও শনিবার সকালেও তা শেষ না হওয়ায় বাকি লাশ পড়ে ছিল পুরনো মর্গেই।

এ দিকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হতেই নতুন মর্গের পিছন দিক থেকে ভেসে আসা পচাগলা বেওয়ারিশ লাশের দুর্গন্ধে অতিষ্ট হয়ে ওঠেন অতিথি অভ্যাগতেরা। তাই কোনও মতে উপস্থিত অতিথিদের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য ও ফিতে কেটেই ‘রণে ভঙ্গ’ দিতে হয় আয়োজকদের।

Advertisement

হাওড়া পুরসভার ২৯ নম্বর ওর্য়াডে ডঃ পিকে ব্যানার্জি রোডে পুরনো পুলিশ মর্গটি নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘ কয়েক দশকের। গত দু’দশকের বেশি সময় ধরে খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে মর্গটির শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র। ফলে মৃতদেহ সংরক্ষণের ন্যূনতম ব্যবস্থাও ছিল না সেখানে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ছিল নিত্যদিন আসা বেওয়ারিশ
লাশের ভিড়।

রাজ্যে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে নতুন মর্গ তৈরির ভাবনাচিন্তা শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত এলাকার তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন যৌথ ভাবে নতুন মর্গটি তৈরি করতে উদ্যোগী হয়। এর পরেই পুরনো মর্গটির পাশে তৈরি হয় ৪০টি মৃতদেহ সংরক্ষণের মতো আধুনিক মানের স্বাস্থ্য সম্মত নতুন মর্গ।

শনিবার ছিল ওই নতুন মর্গের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠান। তাই পুরসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আগের রাতেই পুরানো মর্গ থেকে শিবপুর শ্মশানে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হবে সমস্ত বেওয়ারিশ লাশ। লাশ পোড়ানোর সরকারি খরচ ৩০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০০ টাকা করে দেয় পুরসভা। কিন্তু এই কাজে নিযুক্ত ঠিকাদারের কর্মীরা মর্গ থেকে দফায় দফায় লাশ নিয়ে গেলেও বেওয়ারিশ লাশের পাহাড় পুরোপুরি সরাতে ব্যর্থ হন তাঁরা। দুর্গন্ধও থেকে যায়।

প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘এত দিন ধরে জমে থাকা লাশ এক দিনেই সরিয়ে ফেলা কী কখনও সম্ভব? তাই শেষ পর্যন্ত আড়াইশোর বেশি লাশ শিবপুর শ্মশানে নেওয়া গিয়েছে। বাকিগুলি থেকে গিয়েছে মর্গে।’’ ফলে নতুন মর্গের উদ্বোধনের আগে গোটা এলাকায় প্যান্ডেল করে, ফুল দিয়ে সাজিয়ে, সুগন্ধী ছড়িয়েও গন্ধ লুকনো যায়নি। এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর শৈলেশ রাই বলেন, ‘‘তাড়াহুড়ো করে অনুষ্ঠান করতে গিয়েই বিপত্তি হয়। তবে আমাদের উদ্দেশ্য
সফল হয়েছে।’’

তবে পরিবেশ দূষণের তোয়াক্কা না করে এ ভাবে লাশ পোড়ানোর বিষয়ে তেমন ভাবে মুখ খুলতে চাননি কেউই। হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’’ মর্গের উদ্বোধক অরূপবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘কী হয়েছে তা খোঁজ নিয়ে দেখব।’’ আর জেলা প্রশাসনের কর্তা তথা হাওড়ার জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাশের বক্তব্য, ‘‘এ নিয়ে কোনও কথা বলব না।’’

মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মৃতদেহগুলি শ্মশানে নেওয়ার আগে রাসায়নিক ছড়ানো হয়েছিল। আমরা বহু চেষ্টা করেছি যাতে দূষণ কম হয়। মূলত পুজোর মরসুম থাকায় এবং আর্থিক কিছু সমস্যার জন্য এত মৃতদেহ জমে গিয়েছিল। এ রকম যাতে আর না হয়, তা নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement