প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিল সিপিএম। কিন্তু সংখ্যার বিচারে সেই প্রস্তাব পাশ করা হল না। ফলে প্রধান নিজের পদেই রয়ে গেলেন। কিন্তু তিনি কোন দলের, সেই নিয়েই তৈরি হল জটিলতা। কেন না, প্রধান নির্বাচিত হয়েছিলেন সিপিএমের টিকিটে। সিপিএমের দাবি, বছর দু’য়েক আগে তাঁর সঙ্গে সমস্ত ‘সম্পর্ক ছিন্ন’ করা হয়েছে। অনাস্থাও আনেন তাঁরাই। বিষয়টি নিয়ে ডামাডোল শুরু হয় চণ্ডীতলা ২ ব্লকের জনাই পঞ্চায়েতে।
ওই পঞ্চায়েতে আসন ১২। গত পঞ্চায়েত ভোটে সিপিএম ৭টি আসন পেয়ে বোর্ড গঠন করে। প্রধান হন ওই দলেরই হাবিবা বেগম। বাকি পাঁচটি আসন পায় তৃণমূল। বোর্ড গঠনের কিছু দিন পর থেকে হাবিবার সঙ্গে সিপিএমের অন্য সদস্যদের বিরোধ তৈরি হয়। হাবিবার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। প্রধান পাল্টা অভিযোগ আনেন ওই সদস্যদের বিরুদ্ধে। সিপিএম সদস্যদের দাবি, হাবিবা তাঁদের দলের কেউ নন।
১৭ অগস্ট দুর্নীতির অভিযোগে হাবিবার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন সিপিএমের ছয় সদস্য। বৃহস্পতিবার ছিল তলবি সভা। প্রশাসন সূত্রের খবর, এ দিন সিপিএমের ছয় সদস্যই প্রধানের বিরুদ্ধে ভোট দেন। কিন্তু তৃণমূলের পাঁচ সদস্যের কেউ ভোটাভুটিতে উপস্থিত হননি। হাজির হননি প্রধান নিজেও। আইন অনুযায়ী, প্রধানকে অপসারণ করতে হলে তাঁর বিরুদ্ধে অন্তত ৭টি ভোট (মোট আসনের ৫০%-এর বেশি) দরকার ছিল। কিন্তু তা না হওয়ায় অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ হয়ে যায়। সিপিএম বা তৃণমূল কারও সমর্থন না পেয়েও প্রধান রয়ে গেলেন হাবিবা। বিডিও সিদ্ধার্থ গুঁইন বলেন, ‘‘যিনি প্রধান ছিলেন, তিনিই রইলেন।’’
প্রধান কোন দলের বলে বিবেচিত হবেন? এই প্রশ্নের জবাবে প্রশাসনের এক অফিসার বলেন, ‘‘যে দলের টিকিটে উনি জিতেছেন, সেই দল প্রধানকে বহিষ্কার করেনি। ফলে তাঁকে ওই দলের হিসেবেই ধরতে হবে। যদিও তাঁরাই অনাস্থা এনেছে। কোনও জটিলতা হলে, পরে দেখা হবে।’’
প্রধান বলেন, ‘‘আমি সিপিএমের টিকিটেই জিতেছি। ওরা মুখে বলেছে, আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়েছে। কিন্তু আমাকে দল থেকে বা প্রশাসনের তরফে কিছু জানানো হয়নি। তবে কোন দলের বড় কথা নয়। আমি উন্নয়নের কাজ চালিয়ে যাব। সব দলেরই সাহায্য চাইব।’’ তৃণমূলের বক্তব্য, প্রধানকে সিপিএম বহিষ্কার করেনি। ফলে উনি সিপিএমেরই। পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্য রজতাভ রায়ের অবশ্য জবাব, ‘‘উনি কোনও পরিস্থিতিতেই আমাদের দলের সদস্য নন।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘সরকারি নিয়মকে হাতিয়ার করে তৃণমূল সদস্যরা ভোট না দিয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রধানকে সমর্থন করলেন।’’
জেলা তৃণমূল নেতা সুবীর মুখোপাধ্যায়ের বলেন, ‘‘এটা ওদের নিজেদের মধ্যে দুর্নীতির লড়াই।’’ তাঁর কথায়, ‘‘উন্নয়নের কাজে প্রয়োজনে প্রধানকে সাহায্য করা হবে।’’