ভোটে হারজিতের উত্তাপ মিইয়ে গিয়েছে।
অবশ্য ভিতরে ভিতরে অন্য একটা উত্তাপের চোরাস্রোত বইছে শাসকদলের জয়ী প্রার্থীদের মনে।
ভোটে জেতার পর এখন পুরসভা পরিচালনায় যদি কোনওক্রমে একটা পদ মেলে, তা হলে কোন অঙ্কে কাজে লাগাবেন? এলাকার মানুষের চাহিদার মেটাতে তাঁদের মন দ্রুত পড়ে নেওয়াটা কতটা জরুরি—এমন সব ভাবনাতেই জারিত হচ্ছেন পুরসভার নতুন কাউন্সিলররা।
পুরসভার ৪ নম্বর ওর্য়াডে নতুন কাউন্সিলর সাকির আলি। এলাকার উন্নয়নে কোন কাজে জোর দেবেন শাসকদলের এই কাউন্সিলর? পছন্দের তালিকায় প্রথমেই থাকবে শিক্ষা আর স্বাস্থ্য, এমনটাই জানাচ্ছেন রিষড়া বিধান কলেজের এই প্রাক্তনী। বললেন, “আমাদের মিশ্র ভাষাভাষির এলাকা। স্কুলছুট হয় বাচ্চারা। আবার অনেকে আছে, পড়াশোনা করে অথচ বইখাতা পায় না। প্রাইভেট টিউশনদিতে অভিভাবকেরা অক্ষম। প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। ঠিক করেছি, প্রথমত আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়াদের বিনা পয়সায় বইখাতার জোগান দেওয়া। স্কুলগুলিতে প্রাইভেট টিউশনির বিকল্প হিসেবে সন্ধ্যায় কোচিং ক্লাসের ব্যবস্থা করা। প্রয়োজনে শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের সাহায্য নেওয়া হবে। মাস্টারমশাইরাও এগিয়ে এলে ভাল হয়।”
এলাকার স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল নিয়ে অভিযোগে শেষ নেই। রিষড়া সেবাসদনের মতো ভাল হাসপাতাল গত পুরবোর্ডে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। রিষড়া সেবাসদনের পরিষেবার মান বাড়ানোর বিষয়টি আগামী পুরবোর্ড নিশ্চয় অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখবে, এমনটাই আশা পুরবাসীর। স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতনতা যে অত্যন্ত জরুরি, মানেন সাকিরও। জানালেন, ‘‘শিশু ও বয়স্কদের স্বাস্থ্যের গুরুত্ব দিতে হবে। টিকাকরণ আর রোগ নির্ণয়ের জন্য হেল্থ ক্যাম্পের ব্যব্যস্থা করব। অবশ্যই গ্যাস্ট্রো এবং হার্ট চেকআপের ব্যবস্থা রাখতে হবে।”
সাকির যেমন স্বাস্থ্য আর শিক্ষায় জোর দিতে চান, তেমনি দু’দশক পর ২৩ নম্বর ওর্য়াডে জিতে আসা মনোজ গোস্বামী চান পানীয় জল আর নিকাশি হাল ফেরাতে। তিনি বলেন, ‘‘মানুষের চাহিদা প্রবল। তবে রাতারাতি কিছু বদলানো যায় না। এটা সম্মিলিত কাজ। ধৈর্য্য ধরা জরুরি। আমার এলাকায় পানীয় জলের অভাব রয়েছে। সেটায় অগ্রাধিকার দেব। অল্প বৃষ্টিতেই গৃহবন্দি দশা হয় এখানে। কখনও দু থেকে তিনদিন জল সরে না। তাই নিকাশির উন্নতি চাই।’’
রিষড়া অন্যতম প্রধান সমস্যা স্টেশনের পূর্বপাড়ে জঞ্জালের স্তূপ। যা নিয়ে খেদের শেষ নেই পুরবাসীর। এলাকার এক প্রবীণার কথায়, ‘‘হাওড়া-ব্যান্ডেল মেন শাখায় রিষড়া স্টেশন। অসংখ্য মানুষ দূরপাল্লা আর লোকাল ট্রেনে যাতায়াত করেন এই স্টেশনের উপর দিয়ে। পাহাড় প্রমাণ জঞ্জাল দেখতে দেখতেই স্টেশন পেরোন যাত্রীরা। বাসিন্দাদেরও অবস্থা কাহিল। নতুন পুরবোর্ডের কাছে অনুরোধ রইল, ময়লা সরানোর।”
নব নির্বাচিত কাউন্সিলর শুভজিৎ সরকারও এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষপাতী। ১৭ নম্বর ওর্য়াডে সদ্য জিতে আসা শুভজিৎবাবু বলেন, ‘‘আমার এলাকার বড় সমস্যা ছিল নিকাশি। এখন নর্দমা তৈরির কাজ চলছে। সামনের বর্ষায় আশা করি এলাকা ভাসবে না। কিন্তু এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখা বড় সমস্যা। বাড়ি বাড়ি ময়লা নেওয়া হয় পুরসভার তরফে। কিছু নাগরিক তাও ময়লা রাস্তায় ফেলেন রাস্তায়।’’ তাঁর দাওয়াই, ‘‘সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি যেখানে সেখানে ময়লা ফেললে পুর কর্তৃপক্ষ জরিমানা করবে।”
সন্ধ্যা বাজার এলাকার কাউন্সিলর মনোজ সাউ চাইছেন, ‘‘এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা ভাল করতে। পাশাপাশি ফুটপাত নির্মাণ এবং এলাকায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হবে।’’ তবে আন্তরিক ভাবে চান প্লাষ্টিক বর্জিত হোক পুর এলাকা। তাঁর কথায়। ‘‘নিজের ওর্য়াড থেকেই সেই কাজ শুরু করতে চাইছি।’’
রিষড়ার পশ্চিমপাড় এলাকা থেকে জিতেছেন সন্ধ্যা দাস। তাঁর পছন্দ এলাকার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি। সন্ধ্যাদেবীর যুক্তি, “এলাকাকে প্লাস্টিকমুক্ত করতে হবে। সবুজ বাড়াতে হবে। পার্কগুলোর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি। আমাদের কর্মীদের বোঝাতে হবে। সবুজ বাড়লে এলাকার চেহারাটাই বদলে যাবে।”
এখনও সরকারি ভাবে কেউ দায়িত্ব পাননি। পেলে কী ভাবে কাজে তার প্রতিফলন ঘটবে তাও সময় বলবে। তবে পুর এলাকার উন্নয়নে, পুর পরিষেবার প্রতি নজরে নব নির্বাচিত কাউন্সিলরদের এমন সব ভাবনা আশা জাগিয়েছে পুরবাসীর মনে।
(চলবে)