প্রতীকী ছবি।
বাড়তি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কাজের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু হাওড়া জেলায় ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে গতি নেই।
এই জেলায় মোট পঞ্চায়েতের সংখ্যা ১৫৭। লকডাউনের মধ্যেও ওই প্রকল্পে ছাড় মিলেছে কিছুদিন আগে। কিন্তু জেলা প্রশাসনেরই হিসেব বলছে, বর্তমানে সব মিলিয়ে দৈনিক মাত্র ১১ হাজার জবকার্ডধারী কাজ করছেন। প্রতিটি পঞ্চায়েতে গড় ধরলে প্রতিদিন ৭০ জনের বেশি কাজ পাচ্ছেন না। তা-ও গর্ত অর্থবর্ষের অসমাপ্ত কাজ। অথচ, প্রতিটি পঞ্চায়েতে গড়ে আড়াই হাজার করে জবকার্ডধারী আছেন। এরপরে প্রকল্পে যুক্ত হবেন পরিযায়ী শ্রমিকেরাও। ফলে, কাজে কাঙ্ক্ষিত গতি কবে আসবে, সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
ওই কেন্দ্রীয় প্রকল্প রূপায়ণের মূল দায়িত্ব পঞ্চায়েতের। করোনা-আবহে বিভিন্ন রাজ্য থেকে কাজ হারিয়ে ফিরে আসা শ্রমিকদেরও ওই প্রকল্পে কাজ দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। কিন্তু পঞ্চায়েতগুলি এখনও পর্যন্ত সে ভাবে উদ্যোগী না-হওয়াতেই হাওড়ায় সরকারি নির্দেশিকা কার্যত মাঠে মারা যেতে বসেছে, এই অভিযোগ নানা মহল থেকে শোনা যাচ্ছে।
এ বছর বাজেটে ওই প্রকল্পে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ ছিল ৬১,৫০০ কোটি টাকা। লকডাউনের পরিপ্রেক্ষিতে এ বার অতিরিক্ত ৪০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। মূলত গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজ দেওয়ার জন্যই এই অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে বলে কেন্দ্র জানিয়েছে। তা হলে কেন কাজ দিতে পারছে না হাওড়ার পঞ্চায়েতগুলি?
কাজের চাহিদার কথা মেনে নিয়েও বিভিন্ন পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের দাবি, সমস্যা পরিকাঠামোগত। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে হাজার হাজার জবকার্ডধারীকে কী ভাবে কাজ করানো হবে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট গাইডলাইন আসেনি। তা ছাড়া, গত অর্থবর্ষ থেকেই মাটি কাটার কাজে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হওয়ায় আগে থেকেই ওই প্রকল্পে কাজের গতি কমে যায়। সেই নিষেধাজ্ঞা এখনও রয়েছে। যান চলাচল বন্ধ থাকায় নির্মাণ সহায়কেরা পঞ্চায়েতে আসতে পারছেন না। ফলে, তাঁরা কাজের পরিকল্পনাও করতে পারছেন না।
আমতার একটি পঞ্চায়েতের এক কর্তা বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসন থেকে কাজ করানোর জন্য জোর দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ কী ভাবে হবে, সে বিষয়ে কোনও পরিকল্পনা আমাদের জানানো হচ্ছে না। অল্প লোককে কাজ দিলে বিক্ষোভের আশঙ্কা থাকে। তাই কী করব বুঝতে পারছি না।’’
সমস্যাটির কথা মেনে নিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। তাঁদেরই এক জন বলেন, ‘‘বিডিওদের বলা হয়েছে কাজের নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজে বের করতে। এই কাজে কোনও ঢিলেমি দেওয়া যাবে না।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, কতজন পরিযায়ী শ্রমিক আসছেন এবং তাঁদের মধ্যে কতজন ওই প্রকল্পে কাজ করতে ইচ্ছুক, তা সমীক্ষা করে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিডিওদের। তাঁদের জন্য বিশেষ প্রকল্প রচনা করতে হবে। যাঁদের জবকার্ড নেই, তাঁদের সেটা করে দিতে হবে। জবকার্ডের সঙ্গে ব্যাঙ্ক আ্যাকাউন্টও যোগ করা হবে।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজ দেওয়া যাবে তাঁদের নিভৃতবাসের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেই। বিডিওদের সে দিকে লক্ষ্য রাখতে বলা হয়েছে।’’