ধূলাগড়ি আনাজ বাজারে মদের দোকানে লাইন। ছবি: সুব্রত জানা
মুখের উপরে সটান ‘না’ বলে দিয়েছিলেন দোকানি। তাতে অবশ্য দমে যাননি পান্ডুয়ার ক্ষিরকুণ্ডি গ্রামের লক্ষ্মণ সরেন। কড়কড়ে ৫০ টাকা দিয়ে নতুন গামছা কিনে তা মুখে জড়িয়ে মাস্ক বানিয়ে নিয়েছেন। তার পরে ফের লাইন দিয়ে মদ কিনে হাসিমুখে বাড়িতে ফিরেছেন।
লকডাউনের শুরু থেকে মদের দোকান খোলায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। এই সময়ে অনেকেই মদ না পেয়ে কপাল চাপড়েছেন। অনেকে তিন গুণ দামে এ দিক, সে দিক থেকে জোগাড় করেছেন পছন্দের পানীয়। সোমবার থেকে নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল হতেই সুরারসিকদের মুখে হাসি ফোটে। তাঁরা হামলে পড়েন দোকানে। মঙ্গলবারেও হুগলি জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছিল একই ছবি। কোথাও পুলিশের উপস্থিতিতে নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়ে কেনাকাটা সারা হয়েছে। কোথাও সেই ধৈর্য্যটুকু ধরেনি ক্রেতাদের। ভিড় বাড়তে থাকায় তড়িঘড়ি দোকান বন্ধ করে দিতে হয়েছে কোনও জায়গায়।
বিভিন্ন দোকানের সামনে ‘নো মাস্ক নো লিকার’ পোস্টার ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ মাস্ক পরে না এলে মদ মিলবে না। অধিকাংশ ক্রেতাই মাস্ক পরতে ভোলেননি। যাঁরা তা করেননি, তাঁরা রুমাল বা গামছা দিয়ে কাজ চালিয়েছেন। ক্ষিরকুণ্ডির লক্ষ্মণ সরেন বলেন, ‘‘মাস্ক না থাকায় দোকানদার প্রথমে মদ দেননি। বুদ্ধি খাটিয়ে নতুন গামছা কিনে মুখ বেঁধে তবে মদ পেলাম। আর ভুল হবে না।’’
পোলবার সুগন্ধ্যায় দিল্লি রোডের ধারে অনিল সিংহের দোকান। এ দিন বেলা তিনটেয় তিনি দোকান খোলেন। ভিড় বাড়তে থাকায় বিপত্তি ঘটার আশঙ্কায় ঘণ্টা দু’য়েকের মধ্যেই তিনি দোকান বন্ধ করে দেন। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক দূর থেকেও লোকেরা খুঁজে খুঁজে চলে আসছেন। বিশৃঙ্খলার ভয়ে দোকান বন্ধ করে দিলাম।’’ সোমবার জনাইয়ের একটি দোকানের সামনে দীর্ঘ পথ জুড়ে কার্যত মেলা বসে গিয়েছিল। লুঠের আশঙ্কায় তড়িঘড়ি তিনি দোকান বন্ধ করে দিয়েছিলেন। মঙ্গলবারেও তিনি দোকানই খোলেননি পাছে ভিড় সামাল দিতে না পারেন।
আবগারি দফতরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, হুগলিতে মদ বিক্রির বহর ভালই। সিঙ্গুর আফগারির জেলার (সাতটি ব্লক এলাকা মিলে) সুপার সুপ্রভাত বিশ্বাস জানান, সোমবার এখানে কয়েক ঘন্টায় ৬৫ থেকে ৭০ লক্ষ টাকার মদ বিক্রি হয়েছে। মঙ্গলবারেও বাজার ভালই গিয়েছে। আরামবাগ আবগারি জেলায় ১৫৪টি দোকানের মধ্যে এ দিন ৯০টি খুলেছিল। আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন দোকানে ভিড় সামলাতে রেশন দোকানের কায়দায় টোকেন দেওয়া হয়। দোকানিদের অনেকে জানিয়েছেন, বাংলা মদের চাহিদা অনেক বেড়েছে। টানা লকডাউনে পকেটে টান পড়ায় অনেকে বিলিতি মদের থেকে মুখ ফিরিয়েছেন বলে তাঁদের অনুমান। এসডিপিও (আরামবাগ) নির্মলকুমার দাস বলেন, ‘‘শারীরিক দূরত্ববিধি যাতে কঠোর ভাবে মানা হয়, পুলিশ তা দেখছে।’’