চলছে অবস্থান বিক্ষোভ। —নিজস্ব িচত্র
একটু একটু করে কঠিন হচ্ছে পরিস্থিতি। পিঠ ঠেকছে দেওয়ালে। এই অবস্থায় মজুরির দাবিতে পথে নামতে শুরু করেছেন জুটমিলের শ্রমিকরা। রবিবার সকালে হুগলির বিভিন্ন জুটমিলের সামনে অনশনে বসেন তাঁরা। কয়েক ঘণ্টা পরে অবশ্য অনশন তুলে নেওয়া হয়। কিছু জায়গায় পুলিশ আন্দোলনে বাধা দেয় বলে অভিযোগ। সেই অভিযোগ পুলিশ মানেনি।
চন্দননগর কমিশনারেটের এক আধিকারিক জানান, পুলিশের তরফে আন্দোলনকারীদের বলা হয়, জুটমিলের ব্যাপারে গোটা রাজ্যে একই নিয়ম কার্যকর হবে। ফলে, এটি কোনও একটি জুটমিলের ব্যাপার নয়, গোটা রাজ্যের সামগ্রিক বিষয়। এর পরেই আন্দোলনকারীরা নিজেরাই অনশন তুলে নেন।
কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার জুটমিল-মালিকদের নির্দেশ দিয়েছে, লকডাউন-পর্বে শ্রমিকদের মজুরি মিটিয়ে দিতে। কিন্তু জুটমিলগুলি এখনও সেই নির্দেশ পালন করেনি। প্রতিবাদে বেশ কিছুদিন ধরেই আন্দোলন চালাচ্ছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। প্রশাসনিক স্তরে এ নিয়ে একের পর এক চিঠি দিয়েছে তারা। শুক্র এবং শনিবার হুগলির বিভিন্ন জুটমিলের সামনে অবস্থান হয়েছে। রবিবার শুরু হয় অনশন। ২১টি শ্রমিক সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে এই কর্মসূচি নেওয়া হয়। কোনও জায়গায় জুটমিলের গেটের পাশে, কোথাও শ্রমিক সংগঠনের কার্যালয়ে ওই কর্মসূচি নেওয়া হয়। আন্দোলনকারীদের দাবি, করোনা মোকাবিলায় নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে।
ভদ্রেশ্বর এবং চাঁপদানিতে পুলিশ আন্দোলনকারীদের বাধা দেয় বলে অভিযোগ। এআইটিইউসি অনুমোদিত এফসিএমইউ সংগঠনের অভিযোগ, ডালহৌসি জুটমিলের কাছে পলতাঘাটে জিটি রোডের ধারে ওই কর্মসূচি চলছিল। সেই সময় সংগঠনের তিন নেতাকে স্থানীয় ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে অনশন প্রত্যাহারের শর্তে তাঁদের ছাড়া হয়। জেলা সিপিআই সম্পাদক তিমিরবরণ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসন মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরির ব্যবস্থা করুক। প্রতারক মালিকদের গ্রেফতার করা হোক।’’
সিটু-র অভিযোগ, ভদ্রেশ্বরের নর্থ শ্যামনগর জুটমিলের সামনেও পুলিশ আন্দোলনকারীদের বাধা দিয়েছে। জেলা সিটু নেতা তীর্থঙ্কর রায় বলেন, ‘‘শ্রমিকদের হাতে টাকা নেই। ঘরে কার্যত অনশনই করতে হচ্ছে তাঁদের। প্রকাশ্যে করলে অসুবিধা কোথায়?’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এত প্রশাসনিক মিটিং হচ্ছে, নানা ব্যাপারে নির্দেশ দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। অথচ জুটমিল-মালিকদের ডেকে জোর গলায় কেন মজুরি মেটানোর কথা বলছেন না?’’ এআইটিইউসি-র জেলা সম্পাদক প্রাণেশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘পুলিশের হস্তক্ষেপে অনশন তোলা হয়েছে। প্রশাসন অবিলম্বে মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ওই টাকা মেটাক। না হলে বেশি দিন এই বঞ্চনা বরদাস্ত করা যাবে না। পকেটে পয়সা না থাকলে রাস্তায় নামা ছাড়া শ্রমিকের আর কোনও উপায় থাকবে না।’’