বাড়ির পথ চেয়ে পরিযায়ী শ্রমিকেরা। —নিজস্ব িচত্র
মরিয়া হয়ে সাইকেল নিয়েই বেরিয়ে পড়েছিলেন ওঁদের অনেকে। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ পড়শি রাজ্যে নিজের বাড়িতে ফিরতে পেরেছেন। কিন্তু পুলিশের তল্লাশিতে আটকে পড়ে মাঝপথ থেকে ফিরে আসতে হয়েছে অন্যদের। কী ভাবে বাড়ি ফিরবেন, ভেবে পাচ্ছেন না তাঁরা। হুগলির হরিপাল ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে এমন বেশ কিছু পরিযায়ী শ্রমিক অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আলু বা ধান তোলার মরসুমে ঝাড়খণ্ড থেকে বহু মানুষ হুগলিতে কৃষিশ্রমিকের কাজ করতে আসেন।
এ বারেও হরিপাল ব্লকের বন্দিপুর, কালুবাটী, নবাসন গ্রামে এমন অনেকে এসেছিলেন। কিন্তু লকডাউনে ফিরতে পারেননি। বছর আটত্রিশের রাজেশ বৈঠাও তেমনই একজন। ঝাড়খণ্ডের গুমলা জেলার সিসেইতে তাঁর বাড়ি। গত দেড় দশক ধরে ফি বছর নির্দিষ্ট মরসুমে তিনি কৃষিশ্রমিকের কাজ করতে হরিপালে আসেন। এ বার মাস দু’য়েক আগে এসেছেন। আট-দশ দিন কাজের পরেই লকডাউন হয়ে যায়। তার পর থেকে কাজ বিশেষ মেলেনি। কিছুদিনের মধ্যে হাতের টাকা শেষ। তিনি বলেন, ‘‘যাঁর জমিতে কাজ করি, তাঁর জায়গাতেই এক সঙ্গে অনেকে থাকি। কখনও সেই বাবু, কখনও পঞ্চায়েতের বাবুরা চাল-আলু দিয়েছেন। গ্রামবাসীরাও সাহায্য করেছেন। কিন্তু তাঁরা আর কত দিন আমাদের দেখবেন! মাঝেমধ্যেই খাবারে টান পড়ছে। তা ছাড়া শুধু পেটে খেলেই হবে! গ্রামে পরিবারের জন্য চিন্তা হচ্ছে।’’
বাড়ি ফেরার তাড়নায় সম্প্রতি অন্যদের সঙ্গে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন ওই যুবক। আরামবাগের একটি সেতুর কাছে পুলিশ তাঁকে আটকায়। ফিরে আসতে হয় হরিপালে। এই ভাবেই সঙ্গীদের কেউ বাঁকুড়া বা পুরুলিয়া থেকে ফিরে এসেছেন। ওই শ্রমিকেরা জানান, বাড়ি ফিরতে চেয়ে তাঁরা স্থানীয় বিডিও অফিস এবং থানায় গিয়েছিলেন। সেখানে নিজেদের নাম-ঠিকানার তালিকা দিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু কী ভাবে এবং কবে ফিরতে পারবেন, সেই প্রতিশ্রুতি মেলেনি। নালিকুলের বাসিন্দা কিছু কলেজ পড়ুয়া ওই শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। ইমন সাঁতরা নামে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী নিজেদের রাজ্যে ফেরার জন্য অনলাইনে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ওই শ্রমিকদের নাম পরিচয় নথিভুক্ত করার চেষ্টা করছি। কিন্তু সিস্টেমের ত্রুটির জন্য গত ৪-৫ দিন ধরে সেটা করে ওঠা যায়নি।’’ রাজেশ জানান, মঙ্গলবারেই তিনি শুনেছেন, ডানকুনিতে পৌঁছলে পুলিশের তরফে শ্রমিকদের অন্য রাজ্য বা পশ্চিমবঙ্গের সীমানায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘তেমন হলে এ বার ওই রাস্তাই নিতে হবে। কী হবে, বুঝতে পারছি না। কিন্তু চেষ্টা তো করতেই হবে।’’
ব্লক প্রশাসন সূত্রের বক্তব্য, অনলাইনে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে আবেদন করে শ্রমিকরা নিজেরাই বাসের ব্যবস্থা করে ফিরতে পারবেন। প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘অনলাইনে আবেদন করতে সমস্যা হলে স্থানীয় পঞ্চায়েতে যাওয়া যেতে পারে। পঞ্চায়েতের লোকেরা অনলাইন আবেদন করার ব্যাপারে সাহায্য করবেন।’’