অসহায়: হাসপাতালের কাগজ দেখাচ্ছেন মানাদেবী। —নিজস্ব চিত্র
আপাতত তাঁর জ্বর, সর্দি-কাশি বা শ্বাসকষ্ট নেই।
হাসপাতালের প্রেসক্রিপশন বলছে, তিনি সুস্থ। ঘরে নিভৃতবাসে থাকতে পারেন।
তা সত্ত্বেও ছ’দিন ধরে ঘরছাড়া উলুবেড়িয়ার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের ফুলেশ্বর বাবুপাড়ার মানা পোল্লে নামে এক দুঃস্থ প্রৌঢ়া। খাবারের খোঁজে এই গরমে দিনের বেলা রাস্তায় ঘুরছেন। রাতে কখনও উলুবেড়িয়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে আশ্রয় নিচ্ছেন, কখনও হাসপাতাল চত্বরে।
বছর পঞ্চান্নর প্রৌঢ়ার ‘অপরাধ’, তিনি লকডাউনের মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুর থেকে ঘরে ফিরেছিলেন। তাই করোনা-আতঙ্কে গ্রামবাসী তাঁকে থাকতে দিতে নারাজ। একটাই ঘরে তিনি অসুস্থ স্বামী, এক বিধবা মেয়ে এবং দিনমজুর ছেলেকে নিয়ে থাকতেন।
গ্রামের কয়েকজন যুবকের দাবি, ‘‘ওই মহিলা অনেকদিন বাড়িতে ছিলেন না। কোথায় গিয়েছিলেন সেটাও গ্রামবাসী জানেন না। হঠাৎ করে লকডাউনের মধ্যে চলে আসায় তাঁকে শুধু হাসপাতালে যেতে বলা হয়। ওঁর ঘরের যা অবস্থা, তাতে নিভৃতবাসে থাকা যায় না। তাই ওঁকে অন্যত্র যেতে বলা হয়েছে। আমাদেরও তো প্রাণের দাম আছে।’’
বিপাকে পড়ে মানাদেবীর স্বামী, হৃদ্রোগে আক্রান্ত সুদর্শন এলাকার কাউন্সিলর, পুরসভার চেয়ারম্যান এবং পুলিশেরও দ্বারস্থ হন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু এখনও কোনও সুরাহা হয়নি। কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা খাবার দিলে তবে দু’বেলা খেতে পাচ্ছেন প্রৌঢ়া।
নিজের এই অবস্থায় শুধু দু’চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে মানাদেবীর। মঙ্গলবার রাতে হাসপাতাল চত্ত্বরে খোলা আকাশের নীচে শুয়ে তিনি বলেন, ‘‘কবে যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে! বাড়িতে অসুস্থ স্বামী কী করছে কে জানে!’’
ওই অসহায় প্রৌঢ়াকে ফেরানোর ব্যাপারে প্রশাসনের কী ভূমিকা?
বুধবার এলাকার কাউন্সিলর অর্জুন সরকারকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। উলুবেড়িয়া পুরসভার চেয়ারম্যান অভয় দাস বলেন, ‘‘বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’ একই কথা বলেন উলুবেড়িয়া থানার আইসি কৌশিক কুণ্ডুও।
লকডাউনের আগে চণ্ডীপুরে আত্মীয়ের বিয়েতে গিয়েছিলেন মানাদেবী। লকডাউনে যানবাহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফিরতে পারেননি। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একটি আনাজের গাড়িতে ফেরেন। রাতটুকু ঘরে ছিলেন। শুক্রবার সকালে কয়েকজন গ্রামবাসী ঘরে এসে তাঁকে উলুবেড়িয়া হাসপাতালে গিয়ে করোনা পরীক্ষা করে আসার কথা বলেন। মানাদেবী জানান, সেইমতো তিনি হাসপাতালে যান। চিকিৎসকেরা তাঁকে সুস্থ বলে বাড়ি চলে যেতে বলেন। তিনি চণ্ডীপুরে যাওয়ার কথা জানানোয় প্রেসক্রিপশনে হোম কোয়রান্টিনে থাকার কথা লেখা হয়।
প্রৌঢ়া বলেন, ‘‘সেই কাগজ নিয়ে ফিরলেও গ্রামবাসীরা মানতে চাননি। আমাকে গ্রাম থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়। সুস্থ বলে হাসপাতালও ভর্তি নিচ্ছে না।’’ তাঁর একটাই প্রশ্ন, ‘‘আমার কী দোষ?’’