প্রতীকী ছবি।
শারদোৎসবের পরে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কার কথা শোনা যাচ্ছে নানা মহল থেকে। সে ক্ষেত্রে রোগীদের জায়গা কী ভাবে দেওয়া যাবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই চিন্তায় কলকাতার হাসপাতালগুলি। একই চিন্তা রয়েছে হুগলি জেলা প্রশাসনের অন্দরেও।
হুগলিতে এই মুহূর্তে ৪টি হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে পাওয়া হিসেব অনুযায়ী, চার হাসপাতাল মিলিয়ে মোট ২২৯টি শয্যা রয়েছে। তার মধ্যে ১৭৬টি সাধারণ শয্যা এবং ৫৩টি আইসিইউ। রবিবার ১৪০টি শয্যা ভর্তি ছিল। তার মধ্যে ১০০টি সাধারণ এবং ৪০টি আইসিইউ।
উৎসবকে ঘিরে সামাজিক মেলামেশার আগল একেবারে খুলে গেলে এ রাজ্যেও যদি সংক্রমণ কয়েক গুণ বেড়ে যায়, সে ক্ষেত্রে কী হবে?এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘ধরা যাক, এখনকার থেকে সংক্রমণ পাঁচ গুণ বাড়ল। এখন ৪০ জন আইসিইউতে রয়েছেন মানে তখন ২০০ জনকে আইসিইউতে রাখতে হবে। সংক্রমণ সাত গুণ হলে সেই সংখ্যা ২৮০ হবে। সাধারণ শয্যাতেও একই অনুপাতে রোগী বাড়বে। এত শয্যা বাড়ানো সম্ভব? তা হলেও তুলনায় ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মী কোথায় মিলবে?’’
বর্তমানে কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে হুগলি জেলা প্রশাসনের দাবি। পুজোর পরে যাতে পরিস্থিতির অবনতি না হয়, সে জন্য কোমর বেঁধেছে প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) প্রলয় মজুমদার বলেন, ‘‘গোড়া থেকেই সংক্রমণের রেখচিত্র অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুজোর পরে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে যদি সংক্রমণ বাড়ে, সে ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিকাঠামো তৈরি করা হবে। কিন্তু সেই পরিস্থিতি কোনও ভাবেই কাম্য নয়। তাই সাধারণ মানুষকে আবেদন করছি, স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মেনে উৎসব পালন করুন।’’
এই মুহূর্তে হুগলিতে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা ১৫ হাজার ছুঁইছুঁই। এক সময় অ্যাক্টিভ আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটা কমে গেলেও সম্প্রতি ফের তা কিছুটা বেড়েছে। রবিবার এখানে অ্যাক্টিভ আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৪৪৯ জন।চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, সংক্রমিতের ৮০% উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গযুক্ত থাকছেন। বাকিদের হাসপাতালে ভর্তি করাতে হচ্ছে। ১৪ শতাংশের চিকিৎসা হচ্ছে সাধারণ শয্যায়। জটিলতা বেশি থাকায় ৬% সংক্রমিতকে আইসিইউতে রাখতে হচ্ছে। সংক্রমিতের হার বাড়লে সেই অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজনীয়তাও বাড়বে। তখন বিশেষত বেশি জটিলতা
থাকা সংক্রমিতের চিকিৎসা নিয়ে সমস্যা হবে।
শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ২০টি। সোমবার একটিও খালি ছিল না। হাসপাতালের সহ-সম্পাদক গৌতম সরকারের বক্তব্য, একটা পর্যায়ের পরে পরিকাঠামো বাড়ানো মুশকিল। তা ছাড়া, স্বাস্থ্যকর্মীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। টানা চিকিৎসার ধকলে তাঁদের বা চিকিৎসকদের মানসিক ক্লান্তির দিকটাও ভাবতে হবে। পুজোর পরে রোগীর চাপ কয়েক গুণ বাড়লে ঠিকমতো পরিষেবা তাঁরা দিতে পারবেন তো?’’
হাতের সামনে কেরলের ওনাম উৎসবের উদাহরণ রয়েছে। উৎসবের জোয়ারে গা ভাসিয়ে পরিস্থিতি এ রাজ্যে যাতে হাতের বাইরে না যায়, সে জন্য মানুষকে বারে বারে সচেতন করছেন চিকিৎসকেরা।