—ফাইল চিত্র।
দু’সপ্তাহ ধরে হুগলি জেলায় করোনা আক্রান্তের রেখচিত্র ঊর্ধ্বমুখী। আক্রান্তদের অধিকাংশই ভিন্ রাজ্য থেকে ফিরে আসা শ্রমিক বলে প্রশাসন সূত্রের দাবি। তার মধ্যে বেশিরভাগই আবার আরামবাগ মহকুমার। সোমবার আরামবাগে করোনা-পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব সৌমিত্র মোহন এবং জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও।
প্রথম দিকে মূলত জেলার শহরাঞ্চলেই সংক্রমিতের সন্ধান মিলেছিল। চন্দননগরের উর্দিবাজার, শ্রীরামপুরের ইন্ডিয়া চটকল সংলগ্ন জায়গায় বেশ কিছু মানুষের মধ্যে করোনা সংক্রমণের প্রমাণ মেলে। বিক্ষিপ্ত ভাবে আরও কিছু জায়গায় করোনা রোগী পাওয়া যায়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের তরফে নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পুর-এলাকাগুলিতে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছিল। গত ১৪ মে থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের আগমনে সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
জেলা প্রশাসনের হিসেব বলছে, এ পর্যন্ত হুগলিতে ৩১৭ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে ১৩০ জনই পরিযায়ী শ্রমিক। মোট আক্রান্তের মধ্যে বর্তমানে ১১০ জন পজ়িটিভ। ৯ জন মারা গিয়েছেন। শুধু আরামবাগ মহকুমাতেই আক্রান্ত পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ৭৮। তার মধ্যে ৬৮ জনই খানাকুলের।
জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, ‘‘যে সব পরিযায়ী শ্রমিকের দেহে সংক্রমণের প্রমাণ মিলেছে, অধিকাংশেরই কোনও উপসর্গ নেই।’’ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকরা আসতে শুরু করার পর থেকে করোনা সংক্রমণের হার বেড়েছে। তবে সংক্রমণ রুখতে সব পদক্ষেপই করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই আছে। উদ্বেগের কারণ নেই।’’
গত রবি ও সোমবার করোনা সংক্রমণ নিয়ে একাধিক পরিযায়ী শ্রমিক-সহ ৭ যুবক শ্রীরামপুর শ্রমজীবী কোভিড হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁদের মধ্যে ৪ জন খানাকুলের, তিন জন শ্রীরামপুর মহকুমার।
সোমবার আরামবাগে এসে সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে করোনা রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন স্বাস্থ্যসচিব। পরে তিনি বলেন, ‘‘এখানে কোভিড হাসপাতাল এবং সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে খুব ভাল পরিষেবা এবং পরিকাঠামো আছে। চিকিৎসকরা ভাল কাজ করছেন। রোগীরা পরিষেবা নিয়ে খুশি। সার্বিক ভাবে স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়েও চর্চা হয়েছে।’’
তবে, পরিযায়ী শ্রমিকদের নিভৃতবাসে রাখা নিয়ে প্রশাসনকে রীতিমতো কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে। এ নিয়ে নানা জায়গায় অশান্তিও হচ্ছে। রবিবার রাতেই গোঘাটের শ্যামবাজার হাইস্কুলে কোয়ারন্টিনে থাকা চার পরিযায়ী শ্রমিকের করোনা পজ়িটিভ হওয়ার খবর এলাকায় ছড়ানোয় হট্টগোল শুরু হয়। গভীর রাতে তাঁদের সেখান থেকে আরামবাগের কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করায় স্বাস্থ্য দফতর। এলাকায় পরিযায়ীদের নিভৃতবাস কেন্দ্র করা যাবে না, এই দাবিতে রবিবার সন্ধ্যায় শ্রীরামপুরে জিটি রোড অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শেওড়াফুলিতেও শনিবার রাতভর বিক্ষোভ হয়।
পরিযায়ী শ্রমিকদের নিভৃতবাসে রাখার পরিকাঠামো নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। অভিযোগ, স্থানীয় জায়গায় নিভৃতবাস হওয়ায় কেউ কেউ সেখান থেকে বেরিয়ে বাড়ি থেকে এক চক্কর ঘুরে আসছেন। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, ধনেখালি ব্লকের ১৮টি পঞ্চায়েতে ৬৯টি নিভৃতবাসে ৫০৫ জন রয়েছেন। যদিও গ্রামবাসীদের অভিযোগ, অনেকে খাতায়-কলমে থাকছেন। ওই সব জায়গায় পুলিশি প্রহরাও তেমন নেই। খানাকুলেও কিছু পরিযায়ী শ্রমিক বিধি না-মেনে যত্রতত্র ঘোরাঘুরি করছেন বলে গ্রামবাসীদের দাবি। এই নিয়ে প্রশাসন উদাসীন বলেও অভিযোগ।
স্থানীয় স্কুলে বা অন্য কোনও ভবনে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিভৃতবাস করা নিয়ে এলাকাবাসীর আপত্তির বিষয়ে প্রশাসনের আধিকারিকদের বক্তব্য, অকারণেই কিছু মানুষ উদ্বিগ্ন হচ্ছেন। তাঁরা যাতে পরিস্থিতির কথা বোঝেন, সেই বিষয়ে তাঁদের সচেতন করার চেষ্টা চলছে।