স্মরণ: ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট দেবদত্তা রায়ের স্মৃতিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন চন্দননগর মহকুমাশাসকের দফতরে। মঙ্গলবার। ছবি: তাপস ঘোষ
করোনায় মৃত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট দেবদত্তা রায়ের সংস্পর্শে আসা চন্দননগর মহকুমাশাসক দফতরের কর্মীদের কোভিড পরীক্ষার ব্যবস্থা করল হুগলি জেলা প্রশাসন।
প্রশাসন সূত্রের খবর, মঙ্গলবার ওই দফতরের ৯ জন কর্মীর লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে চন্দননগর মহকুমা হাসপাতাল থেকে পরীক্ষার জন্য কলকাতায় পাঠানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দফতরের অন্যদেরও ওই পরীক্ষা করা হবে। মহকুমা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, দেবদত্তা শেষ অফিস করেছিলেন গত ৩০ জুন। পরের দিন থেকে ছুটি নেন। ফলে ওই সময়ের পর থেকে ১৪ দিন পেরিয়েছে। তা সত্বেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কর্মীদের করোনা পরীক্ষা করানো হচ্ছে।
প্রশাসন সূত্রের দাবি, সন্তানকে দেখভালের জন্য গত পয়লা জুলাই থেকে ১০ দিনের ছুটি নেন দেবদত্তা। বাড়ি ফিরে অসুস্থ হন। ব্যারাকপুর বিএন বসু মেমোরিয়াল হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় পাঠানো হয়। গত ৮ জুলাই রিপোর্ট মেলে, করোনা পজ়িটিভ। তবে, তিনি হাসপাতালে ভর্তি হননি। বাড়িতেই নিভৃতবাসে ছিলেন। রবিবার বিকেলে সঙ্কটজনক অবস্থায় তাঁকে শ্রীরামপুর শ্রমজীবী কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সোমবার সকালে মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নামে জেলার প্রশাসনিক মহলে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বাড়িতে শোকবার্তা পাঠান।
এ দিন চন্দননগরের মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে দেবদত্তার ছবিতে শ্রদ্ধা জানানো হয় প্রশাসনের তরফে। মহকুমাশাসক (চন্দননগর) মৌমিতা সাহা বলেন, ‘‘দেবদত্তা কাজ ভালবাসতেন। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সমস্ত পরিষেবা সচল রাখা হয়েছে।’’ তিনি জানান, দফতরের কর্মীদের শারীরিক পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। জুনের শেষ দু’-এক দিন যে সব সাধারণ মানুষ দফতরে এসেছিলেন, তাঁদের চিহ্নিত করে কোভিড পরীক্ষার চেষ্টা করা হবে।
এ দিকে, করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের সংস্পর্শে এসে যাঁদের কাজ করতে হচ্ছে, বিভিন্ন দফতরের সেই সব কর্মী-আধিকারিকদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার দাবি উঠছে। নাগরিক সংগঠন ‘অল বেঙ্গল সিটিজেন্স ফোরাম’-এর রাজ্য সভাপতি শৈলেন পর্বত বলেন, ‘‘মানুষের কাজ করতে করতেই ওই ডব্লিউবিসিএস অফিসার চলে গেলেন। সমবেদনা জানানোর ভাষা নেই। কর্তব্যের খাতিরে যাঁদের জনগণের সংস্পর্শে কাজ করতে হয়, তাঁদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং প্রয়োজনে কোভিড পরীক্ষা করা হোক।’’
‘কর্তব্যপরায়ণ’ আধিকারিক দেবদত্তাকে ‘সেবা শহিদ’ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে চন্দননগরের সংগঠন ‘আইন সহায়তা কেন্দ্র’। সংগঠনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিক-কর্মী, পুরসভার সাফাইকর্মী-সহ অন্য কর্মী, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী প্রমুখ কঠিন পরিস্থিতিতেও মানুষের সংস্পর্শে এসে তাঁদের পরিষেবা দিচ্ছেন। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এঁদের করোনা পরীক্ষা করানো দরকার।’’
দেবদত্তার মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে বার্তা দিয়েছে ডব্লিউবিসি অফিসারদের সংগঠন। আধিকারিকদের বক্তব্য, করোনার বিরুদ্ধে প্রথম সারির যোদ্ধা ছিলেন দেবদত্তা। করোনার বিরুদ্ধে এই লড়াই এখনও শেষ হয়নি। সবাই মিলে এই লড়াই করে দেবদত্তার আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধা জানানোর বার্তা দেওয়া হয়।