প্রতীকী চিত্র।
এখানে ১৪ দিনে অক্ষরের পাঠ মেলে।
অ, আ, ই, ঈ... থেকে A, B, C, D...।
এখানে আসার আগে যিনি টিপ সই করতেন, ১৫ দিনের মাথায় তিনি নাম সই করতে পারেন!
প্রতিদিনি সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত নিখরচায় দু’বছর ধরে এই ক্লাস চলছে উলুবেড়িয়া মহকুমা উপ-সংশোধনাগারে। এ জন্য রীতিমতো ব্ল্যাকবোর্ড বসিয়ে ক্লাসরুম তৈরি হয়েছে সংশোধনাগারের দোতলায়। এখানে সাজাপ্রাপ্ত বন্দিরা থাকেন না। থাকেন বিচারাধীন বন্দিরা। তাঁরাই এখানে পড়ুয়া। শিক্ষক— শিক্ষিত বন্দিরা। কিছুদিন অন্তর এই বন্দিদের হয় অন্য সংশোধনাগারে পাঠানো হয়, নয়তো তাঁরা জামিন পেয়ে যান। তাই এই স্কুলের পড়ুয়া ও শিক্ষক ঘন ঘন পরিবর্তন হয়। ফলে, এখানে বন্দিদের বেশি পড়াশোনা করানো সম্ভব হয় না। তবে, তাঁদের অক্ষরজ্ঞানটা হয়। অন্তত ১৪ দিন সংশোধনাগারে থাকতেই হয় বেশির ভাগ বন্দিকে। ততদিনে তাঁরা নিজের নাম সই করতে শিখে যান।
উদ্যোগটা জেল-সুপার পুলক মণ্ডলের। স্কুলের জন্য নিজেই বই কিনেছেন। এ ছাড়াও বইয়ের জন্য তদ্বির করেছেন স্কুল শিক্ষা দফতরেও। ১৫ দিন অন্তর স্কুলে পরীক্ষা হয়। খাতা দেখেন পুলকবাবুই। তিনি বলেন, ‘‘অন্তত অক্ষর জ্ঞানটুকু হলেও বিচার শেষে মুক্তির পরে বন্দিরা আত্মসম্মান নিয়ে ঘুরতে পারবেন। ভাল আচরণের প্রাথমিক পাঠও তাঁরা অর্জন করছেন এখানে। এতে তাঁদের সাজার মেয়াদও পরে কমতে পারে। সেই কারণেই চেষ্টা করছি।’’
এই স্কুলে বর্তমানে পড়ুয়ার সংখ্যা ১০। তাঁদের বয়স ২০-২৫। শিক্ষক ওয়াসিম আক্রমের বয়স ২৬। তিনি উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ। সংশোধনাগারে আসার আগে কখনও ছাত্র পড়াননি ওয়াসিম। অথচ, এখন সেই কাজটিই করছেন অবলীলায়। তাঁর কথায়, ‘‘এই মানুষগুলির বয়স হয়েছে। বাড়িতে থাকলে লজ্জায় বই ছুঁতেন না। এখানে লোকচক্ষুর অন্তরালে পড়তে তাঁদের লজ্জা করছে না।’’
যাঁদের এখানে একটু বেশিদিন থাকতে হয়, তাঁদের জ্ঞানার্জনের বহর আর একটু বেশি হয়। যেমনটি হয়েছে মনিরুল ইসলামের। প্রায় চার মাস এখানে রয়েছেন বছর আঠাশের এই যুবক। নিরক্ষর ছিলেন। এখন রবীন্দ্র-কবিতা পড়েন। গত ৯ মে সংশোধনাগারের রবীন্দ্র-জয়ন্তীতে আবৃত্তিও করেছেন।
‘‘শিক্ষার গুণ একেই বলে’’— বলছেন সুপার।