বন্ধ আমতা-বাগনান রুটের বাস (বাঁদিকে)। বিজেপি নেতাদের মুক্তির দাবিতে শ্যামপুর রোডের লাইব্রেরি মোড়ে বিজেপির অবরোধ।(ডানদিকে) —নিজস্ব চিত্র।
দলীয় কর্মী খুনের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিজেপির ডাকা বন্ধে পথে নামেনি বাগনান-আমতা (৭৬ নম্বর) রুট-এর কোনও বাস। শুক্রবার সেই রুট-এ বাস পরিষেবাই বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। রাস্তায় বাস না-থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন বহু যাত্রী। লক্ষ্মীপুজোর কেনাকাটা করতে আমতা থেকে বহু মানুষ বাগনানে আসেন। বাস বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েন তাঁরা।
বৃহস্পতিবার ১২ ঘণ্টার বাগনান বন্ধের ডাক দিয়েছিল বিজেপি। অন্য রুটগুলিতে বাস চললেও দু’টি ট্রিপের পরে সে দিন বাগনান-আমতা রুট-এ বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বাস মালিকদের অভিযোগ, বাগনানের বাঙালপুরের কাছে বিজেপি কর্মীরা তাঁদের বাস চালাতে বাধা দেন। যার ফলে সকাল ৭টার পরে তাঁরা বাস চালাতে পারেননি।
শুক্রবার সকালে ওই রুট-এ বাস ছাড়ার ঠিক আগে বাগনান বাসস্ট্যান্ড-এ একদল তৃণমূল কর্মী হাজির হন। জানিয়ে দেন, বৃহস্পতিবার যে হেতু, ওই রুট-এ বাস চলেনি, তাই এ দিনও সেখানে বাস চলবে না। বাসচালক এবং কন্ডাক্টরদের তাঁরা এ-ও জানিয়ে দেন, স্ট্যান্ডে বাস রাখা যাবে না। ফলে, বাসগুলি আমতা স্ট্যান্ডে ফিরে যায়। এই রুট-এ প্রতিদিন ২০টি বাস চলে। প্রায় ৫ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন।
তৃণমূলের বক্তব্য, বন্ধের দিন পুলিশ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিয়েছিল। সব রুট-এ বাস চলেছে। শুধুমাত্র বাগনান-আমতা রুট-এ চলেনি। শাসকদলের অভিযোগ, বাসমালিকেরা ইচ্ছা করে বাস চালাননি। এর ফলে বহু মানুষ বিপাকে পড়েছিলেন। বাগনানের বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের অন্যতম কো-অর্ডিনেটর অরুণাভ সেনের কথায়, ‘‘প্রশাসনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলেও বাস চলাচল বন্ধ রেখে বাসমালিকেরা অন্যায় করেছেন। সেই কারণেই শুক্রবার বাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’’
বাস মালিকদের বক্তব্য, দু’টি রাজনৈতিক দলের কাজিয়ার মাঝে পড়ে তাঁরা বলির পাঁঠা হচ্ছেন। উলুবেড়িয়া মহকুমা বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সম্পাদক গোপাল পালের কথায়, ‘‘আমরা পড়েছি উভয় সঙ্কটে। পুরো বিষয়টি জানিয়ে এবং সমস্যার সমাধান চেয়ে জেলা প্রশাসন-সহ বিভিন্ন মহলে চিঠি লিখব।’’
বিজেপির হাওড়া গ্রামীণ জেলা সভাপতি শিবশঙ্কর বেজ বলেন, ‘‘বন্ধের দিন তৃণমূলের গুন্ডামি এবং পুলিশের অতিসক্রিয়তায় মিছিল করতে পারিনি। তাহলে বাস চলাচলে বাধা দেব কী করে! বহু মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বন্ধকে সমর্থন করেছেন। তাতেই তৃণমূলের গাত্রদাহ হয়েছে। তাই তারা বাস বন্ধ করে দিয়েছে।’’ পুলিশকে তাঁর খোঁচা, ‘‘পুলিশ তো জোর করে বন্ধের দিন দোকান খুলিয়েছে। তাহলে এ দিন কেন তারা বাস চালানোর ব্যবস্থা করল না।’’
হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, বাগনান-আমতা রুট-এ জোর করে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার কোনও অভিযোগ তাঁদের কাছে আসেনি। এলে খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।
বন্ধের দিন ধৃত বিজেপি নেতা প্রেমাংশু রানা-সহ ছ’জনের মুক্তির দাবিতে শুক্রবার সকালে লাইব্রেরি মোড়ে বাগনান-শ্যামপুর রোড অবরোধ করেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। পুলিশ দ্রুত অবরোধ তুলে দেয়। এ দিন মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক ধৃতদের ১০ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।