বন্ধ: এই ছবি বদলের আশা চন্দননগরে। ফাইল ছবি
পরিবেশকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে আপত্তি তুলছিলেন। আন্দোলন চলছিলই। অবশেষে চন্দননগর শহরে ডিজে নিষিদ্ধ করল পুরসভা।
এ সংক্রান্ত নোটিস ইতিমধ্যেই পুরভবন-সহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা কেউ অমান্য করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও পুরসভা জানিয়েছে। পুরসভার তরফে জারি করা ওই নির্দেশের কথা পুলিশ, প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরেও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পুর কমিশনার স্বপন কুণ্ডু বলেন, ‘‘আমরা লক্ষ্য করছিলাম ডিজে-র উপদ্রব মারাত্মক বেড়ে যাচ্ছে। ডিজে মারাত্মক কুপ্রভাব পড়ে প্রকৃতি, পরিবেশের উপর। মানুষের শরীরের ক্ষেত্রেও তা ক্ষতিকর। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষ, শিশু ও রোগীদের ওই আওয়াজে শরীর খারাপ হয়। আমরা ডিজে নিয়ন্ত্রণে এ বার কঠোর ব্যবস্থা নেব। মানুষের সচেতনতার জন্য প্রচারও চালানো হবে।’’ চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন, পুলিশের পক্ষ থেকে ডিজে-র বিরুদ্ধে সচেতনতার জন্য বহু শিবির, সেমিনার করা হয়। কিন্তু মানুষের শুভবুদ্ধিও জরুরি। সমাজের সব পক্ষের সচেতনতা দরকার।
পুরসভার সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষ খুশি। খুশি পরিবেশপ্রেমীরাও। তাঁরা মনে করছেন দেরিতে হলেও অবশেষে ঘুম ভাঙল পুরসভার। স্বপ্না নন্দী নামে শহরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘ডিজে এখন সমাজের ব্যাধি। এই ব্যাধি দূর করতে এখনই আইন প্রয়োগের দরকার। কোনও পুজো মানেই ভাসানে কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি করে ডিজে চালিয়ে নাচ। প্রথম থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হলে মানুষের অভ্যাস বদলাত।’’
চন্দননগর পুরসভা এখন ডিজে নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও কলকাতা হাইকোর্ট ১৯৯৭ সালেই ডিজে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল। তার পরে ২০০৬ এবং ২০১১ সালে দু’দফায় রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদও ডিজে বন্ধে কঠোর বার্তা দেয়। ডিজে বাজেয়াপ্ত করার উপরও জোর দেওয়া হয়। কেউ ডিজে বাজালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার সংস্থান আইনে রয়েছে। দোষীকে এক লক্ষ টাকা জরিমানা এবং পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাবাসের নিদানও রয়েছে। পরিবেশ সুরক্ষা আইনে ডিজে-র বিরুদ্ধে আদালত পুলিশকে সরাসরি মামলা করা বা তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতাও দিয়েছে।
এ সব সত্ত্বেও বছরভর নানা সামাজিক-পারিবারিক অনুষ্ঠান বা উৎসব উদ্যাপনের অনুষঙ্গ হয়ে গিয়েছে ডিজে। পুলিশ প্রশাসন বা চিকিৎসকদের হুঁশিয়ারিতেও কর্ণপাত করেন না এক শ্রেণির উদ্যোক্তারা। প্রতিবাদ করতে গিয়ে সাধারণ মানুষ নিগৃহীত হয়েছেন, এমন নজিরও রয়েছে। তাই আইন রয়ে গিয়েছে শুধু খাতায়-কলমে। শব্দ-দৈত্যকে বোতলে ভরে রাখা যায়নি। চন্দননগর পুরসভার নতুন নিষেধাজ্ঞায় সেই দৈত্য এ বার বন্দি হয় কিনা, এখন সেটাই দেখার।