প্রতীক ছবি।
উৎসবের চন্দননগরে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে প্রকাশ্যে রাস্তার ধারেই দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন দুই মদ্যপ যুবক। বেছে নিয়েছিলেন দেওয়াল। তা দেখে আপত্তি জানিয়েছিলেন চন্দননগর পুরসভার এক আধিকারিক। এই ‘অপরাধে’ ওই পুর আধিকারিককে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল ওই দুই যুবকের বিরুদ্ধে।
সোমবার, অষ্টমীর বিকেলে চন্দননগর পুরসভার কাছেই ওই ঘটনা ঘটে। পুরকর্মী এবং স্থানীয় লোকজন এসে বিশ্বজিৎ রায় নামে ওই পুর আধিকারিককে উদ্ধার করেন। বিশ্বজিৎবাবু পুরসভার অফিস সুপারিন্টেন্ডেন্ট। তাঁকে মারধরের অভিযোগে দুই যুবককেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতেরা শহরের কাঁটাপুকুর এলাকার বাসিন্দা। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘ওই দু’জনকে শুধু বলেছিলাম, কাছেই সুলভ শৌচাগার রয়েছে। রাস্তার ধারে ভিড়ের মধ্যে এ সব করা ঠিক নয়। এতেই ওরা আমাকে প্রথমে গালিগালাজ করে। বুঝতে পারছিলাম, ওরা নেশা করে রয়েছে। এক জন আচমকা বুকে ঘুষি চালিয়ে দেয়। তারপরে রাস্তায় ফেলে লাথি মারতে থাকে। ভাগ্যিস, তখন আশপাশ থেকে লোকজন চলে এসেছিলেন। না হলে আমার বড় বিপদ হতে পারত।’’
জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্য এখন শহরের সব রাস্তাতেই ভিড়। লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থীর সুবিধার জন্য এ বার পুরসভা এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে চন্দননগর ও ভদ্রেশ্বরের মধ্যে ১৫০টি জৈব শৌচাগার বসানো হয়েছে। রয়েছে বেশ কিছু সুলভ শৌচাগারও। এ ছাড়াও বহু পুজো কমিটিই মণ্ডপের পাশে অস্থায়ী শৌচাগারের ব্যবস্থা করেছেন। তা সত্ত্বেও, পুণ্যার্থীদের একাংশ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ। এতে শহরবাসীর অনেকেও অসন্তুষ্ট। এ ভাবে পরিবেশ নষ্ট হতে দেখেও আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে তাঁদের অনেকেই আপত্তি জানাতে পারেন না। এ দিনের ঘটনার কথা শুনে তাঁরা জানান, যে ভাবে এক পুরকর্তার গায়ে হাত তোলা হল, তাতে তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে।
এ দিন পুরসভার সামনে যে দেওয়ালটি দুই যুবকে বেছে নিয়েছিলেন, সেটি মেরি পার্কের। সেখানে কোনও নিকাশি নালা ছিল না। অথচ, কয়েক হাত দূরেই রয়েছে সুলভ শৌচাগার। আবার একটু দূরে বড়বাজারের পুজো মণ্ডপের কাছে বসানো হয়েছে জৈব শৌচাগার। কিন্তু দুই যুবক সে সবের ধারে-কাছে যাননি। মেরি পার্কের সামনের রাস্তাতেই ট্রাকে বিসর্জনের আলো সাজানোর কাজ চলছে। দর্শনার্থীরা ওই রাস্তা দিয়ে বড়বাজার বা পাদ্রিপাড়ার ঠাকুর দেখতে যান। ফলে, ভিড় ছিলই। বিশ্বজিৎবাবুকে আক্রান্ত হতে দেখে তাঁরা এগিয়ে আসেন। চলে আসেন পুরকর্মীরাও। দুই যুবককে আটকে রেখে খবর দেওয়া হয় পুলিশে।
চন্দননগরের পুর কমিশনার স্বপন কুণ্ডু জানান, বহু দর্শনার্থীই জৈব শৌচাগার বা সুলভ শৌচাগার ব্যবহার করছেন। সকলেই তা করলে দৃশ্যদূষণ বা পথঘাট নোংরা হওয়া আটকানো যায়। বিশ্বজিৎবাবু আপত্তি জানিয়ে ঠিক কাজই করেছিলেন। কিন্তু এ জন্য তাঁকে আক্রান্ত হতে হবে, ভাবা যাচ্ছে না।