প্রতিবাদের স্বর জোরালো হচ্ছে

পুজো-পার্বণে হিন্দু ধর্মে বলি কিছুকাল আগেও একটা অন্যতম অঙ্গ ছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ধর্মের নামে বলির বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। সাম্প্রতিক কালে বহু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও বলিপ্রথার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে।

Advertisement

বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় (পরিবেশবিদ)

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৪২
Share:

ছবি: সংগৃহীত

শারদোৎসব বাঙালি তথা ভারতের সামাজিক মেলবন্ধনের উৎসব। পরস্পরকে কাছে টানার উৎসব। এই আনন্দযজ্ঞের মধ্যেই তিল তিল করে বাসা বেঁধেছে ‘দূষণ রিপু’। তার কত রূপ! যা অপরের দুঃখের কারণ হচ্ছে।

Advertisement

পুজো-পার্বণে হিন্দু ধর্মে বলি কিছুকাল আগেও একটা অন্যতম অঙ্গ ছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ধর্মের নামে বলির বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। সাম্প্রতিক কালে বহু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও বলিপ্রথার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে। মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, শিশুদের মনে পশুবলি কুপ্রভাব ফেলে। সুপ্রিম কোর্ট প্রকাশ্যে জীবহত্যার বিরুদ্ধে সাবধান-বাণী শুনিয়েছে। প্রকাশ্যে জীবহত্যা এখনও যে কমেছে, তা নয়। তবে, প্রতিবাদী স্বর জোরালো হচ্ছে।

উৎসবে ঢাকের আওয়াজ বিশেষ মাত্রা আনে। কিন্তু ঢাককে সুসজ্জিত করতে বকের পালক ব্যবহার করতে যে পরিমাণ বক হত্যা হয়, তার খোঁজ আমরা অনেকেই রাখি না। বকহত্যার বেদনাই বাল্মিকীর মহাকাব্য লেখার পথ প্রশস্ত করে। সেই রামায়ণে উল্লিখিত দুর্গাপুজোই আজ বাঙালির প্রাণের পূজো। ভাবতে অবাক লাগে, বক হত্যা করেই আজ পুজোর অন্যতম বাদ্যযন্ত্রকে সাজানো হচ্ছে। ফলে, এক বিশেষ প্রজাতির বক সঙ্কটের মুখে।

Advertisement

দশমীতে প্রতিমা নদী-পুকুরে বিসর্জন হয়। যে বাঙালির শ্বাস-প্রশ্বাসে এই উৎসব, প্রতিমা নদী-পুকুরে ফেলার পর তার পরিণতি কী হয়, তা ক’জন ভাবেন? সেই ভাবনাও একেবারে সাম্প্রতিক। নদীর জলে পূজো বা ধর্মানুষ্ঠানের বর্জ্য ফেলার রীতি শতাব্দীপ্রাচীন। পরিবেশবিদরা, এই প্রথার অভিমুখ পাল্টানোর কথা বলতে শুরু করেছেন। ফুল জলে ফেলে নষ্ট করা যাবে না, তাকে পুর্নব্যবহার করে রং তৈরি করা যায়। পুজোর কাঠামো দ্রুত তুলে ফেলে নদীর স্রোতের বাধা মুক্ত করতে হয়। প্রতিমার খড়, বাঁশ বা রং দীর্ঘ সময় জলে থাকলে জলদূষণ বাড়ে। জলজ প্রাণীরও ক্ষতি হয়। এতে পরিবেশের উপর যে চাপ সৃষ্টি হয়, তা কখনই বাঞ্ছনীয় নয়।

ধরেই নেওয়া যায়, উৎসবে উচ্চস্বরে মাইক বাজবে। নিষেধ সত্ত্বেও ফাটবে শব্দবাজি। তবু চেষ্টা করতে হবে নৈঃশব্দের অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে। ‘শব্দদানব’ এক সময় এ রাজ্যে বোতলবন্দি হয়েছিল। কিন্তু সে আবার বাইরে বেরিয়েছে। শব্দদানব জব্দ না হলে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে আরও অনেক শব্দ-শহিদের জন্য। এ রাজ্যে ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১২ জন শব্দ-শহিদ হয়েছেন। একটি ছাড়া আর কোনও ক্ষেত্রেই দোষীরা শাস্তি পাননি। দোষীদের দ্রুত শাস্তি ও শব্দ-শহিদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের জন্য হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা বিচারাধীন। জারি রয়েছে নাগরিক আন্দোলন।

তবে, অনেক পূজো কমিটি শারদীয়া উৎসবে পরিবেশ ভাবনাকে সামনে এনেছে। পরিবেশ-বান্ধব শারদোৎসব করার জন্য পুরস্কার চালু হয়েছে। এমন পুজো আরও ছড়িয়ে পড়ুক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement