প্রতীকী ছবি।
ব্যবসাতে একের পর এক ধাক্কায় এমনিতেই বেসামাল ছিলেন ডোমজুড়ের জয়চণ্ডীতলার দুধকুমার পুরকায়স্থ। লকডাউন তাঁকে যেন মাটিতে পেড়ে ফেলেছে! তাঁর ঝুটো গয়না তৈরির কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে, কারিগরদের মজুরি দিতে পারছেন না। নিজেরও রোজগার নেই। আপাতত রেশনের চাল-আটা আর মুদির দোকানে ধার করে সংসার চালাতে হচ্ছে তাঁকে।
লকডাউনকে ব্যবসার ‘মৃত্যুবাণ’ হিসেবে দেখছেন দুধকুমার। তাঁর খেদ, ‘‘লকডাউন উঠলেই যে ব্যবসা রমরমিয়ে চলবে, সেই স্বপ্ন দেখি না। ঝুটো গয়না হল শখের জিনিস। কিন্তু যা দিনকাল আসছে তাতে মানুষ খেয়ে-পরে বাঁচবেন না শখ মেটাবেন?’’
জয়চণ্ডীতলায় অনেক ঝুটো গয়না তৈরির কারখানা রয়েছে। সাধারণ সময়ে যন্ত্রের শব্দ শোনা যায় এখানে এলেই। কারখানা-মালিকেরা কলকাতার বড় ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বরাত আনেন। নিজেদের কারিগরদের দিয়ে গয়না তৈরি করিয়ে ফের তা ব্যবসায়ীদের জোগান দেন।
কিন্তু লকডাউনে বরাত বন্ধ। জয়চণ্ডীতলাও নিঝুম। একই রকম না হলেও আঘাত এই ব্যবসায় আগেও এসেছে। কারখানা-মালিকেরা জানান, ২০১১ সালে অ্যালুমিনিয়ামের উপরে রাজ্য সরকার ভ্যাট বসায়। ঝুটো গয়নার প্রধান কাঁচামালই হল অ্যালুমিনিয়াম। ভ্যাটের জন্য লাভ কমতে থাকে কারখানা-মালিকদের। তাঁদের আবেদনে অবশ্য রাজ্য সরকার ভ্যাট প্রত্যাহার করে। স্বস্তি পান কারখানা-মালিকেরা।
কিন্তু সেই স্বস্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ২০১৬ সালের নভেম্বরে নোটবন্দি এবং ’১৭-য় জিএসটি-র ধাক্কায় শিল্পের ভিতটাই নড়বড়ে হয়ে যায়। কমতে থাকে লাভ। দুধকুমার বলেন, ‘‘এক সময়ে আমার কাছে ৫০ জন কারিগর কাজ করতেন। এখন মাত্র ১০ জনকে নিয়ে কাজ সারি। বরাত অনেক দিন ধরেই কমছিল। এখন সব শেষ।’’
গত ২৩ মার্চের পর থেকে কারখানা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখানে কাজ করে একজন কারিগর দৈনিক তিনশো টাকা পর্যন্ত রোজগার করতে পারেন। দুধকুমার বলেন, ‘‘২৩ মার্চ পর্যন্ত কারিগরেরা যা কাজ করেছেন, সেই পারিশ্রমিক মিটিয়ে দিয়েছি। কাজ না-থাকায় কারিগরদের মজুরি দিতে পারছি না। আমার নিজের অবস্থাও শোচনীয়। এখন কোনও দোকানদার ধার দিতেও রাজি হচ্ছেন না।’’
শুধু জয়চণ্ডীতলা নয়, ঝুটো গয়না তৈরির কারখানা আছে ডোমজুড়, কাটলিয়া, বেগড়ি, মাকড়দহ এবং নিবড়াতেও। গত কয়েক বছরে ব্যবসা কমেছে সব জায়গাতেই। কারখানা-মালিক এবং কারিগর মিলিয়ে একসময়ে এই সব জায়গায় ওই ব্যবসায় জড়িত ছিলেন প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার। এখন তা ঠেকেছে মাত্র দু’হাজারে। দুধকুমার বলেন, ‘‘আজ না হয় কাল লকডাউন উঠবে। কিন্তু তারপরে এই দু’হাজার পরিবারও এই শিল্প থেকে অন্নসংস্থান করতে পারবে কিনা সন্দেহ!’’
আশঙ্কার কালো মেঘ জমেছে বাকি কারখানার মালিক এবং কারিগরদের মধ্যেও।