Paddy

আলু চাষ শুরুর আগে আবার সেই নাড়ায় আগুন

কোথাও কোথাও নাড়া পোড়ানো হচ্ছে বলে মেনে নিয়েছেন মহকুমা কৃষি আধিকারিক সজল ঘোষ।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২০ ০৫:১৭
Share:

দূষণ: গোঘাটের মামুদপুরে পুড়ছে নাড়া — ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

আলু চাষের মরসুম শুরু হচ্ছে। তাতে তড়িঘড়ি জমি পরিষ্কার করতে গিয়ে বিক্ষিপ্ত ভাবে ‘নাড়া’ (ধান গাছের অবশিষ্ট অংশ যা ধান কাটার পরে মাটিতে পড়ে থাকে) পোড়ানোও শুরু হয়ে গিয়েছে

Advertisement

আরামবাগ মহকুমায়। করোনা আবহে বায়ুদূষণ রোধে পরিবেশকর্মীরা সরব। কারণে, এতে সংক্রমিতদের শ্বাসকষ্ট বাড়ে। বাতাসে দূষণের মাত্রা যাতে না বাড়ে, সে জন্য কালীপুজো-দীপাবলিতে সব ধরনের বাজি পোড়ানোতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। নাড়া পোড়ানোর জন্যও বায়ু দূষিত হয়, বলছেন পরিবেশকর্মীরা। কিন্তু কে শোনে কার কথা! সব মিলিয়ে কৃষি দফতরের বিরুদ্ধে নজরদারির অভাবের অভিযোগ উঠছে। শিশিরে ভেজা ‘নাড়া’ পোড়ানোতে দীর্ঘক্ষণ ধরে কালো ধোঁয়ায় ভরে থাকছে এলাকা।

কোথাও কোথাও নাড়া পোড়ানো হচ্ছে বলে মেনে নিয়েছেন মহকুমা কৃষি আধিকারিক সজল ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘মানুষকে সচেতন করতে আমাদের কসুর নেই। ওই ধোঁয়ায় সংক্রমিতদের বিপদ বাড়বে বলে আমরা প্রচার চালাচ্ছি। কিন্তু মানুষ সচেতন না হলে আমরা অসহায়। আইনগত পদক্ষেপের বিধান থাকলেও আপাতত সচেতনতার উপরই জোর দেওয়া হয়েছে।” কৃষি দফতরের পক্ষ থেকে লিফলেট, ব্যানার, হোর্ডিং লাগিয়ে সচেতনতার প্রচার চলছে ঠিকই। কিন্তু তা এক শ্রেণির চাষির কানে কতটা ঢুকছে, সে প্রশ্ন উঠছে। আরামবাগের রামনগর গ্রামের চাষি বিদ্যাপতি বারুই বলেন, “আমন ধান তুলেই সেই জমিতে প্রায় সঙ্গে সঙ্গে আলু বসানো হয়।

Advertisement

কম সময়ের মধ্যে ধান কেটে জমি পরিষ্কার করতে হয়। তাই যন্ত্রে ধান কেটে নাড়া রাতারাতি পুড়িয়ে দেওয়া ছাড়া চাষির কাছে কোনও বিকল্প থাকে না। আলু চাষে দেরি হলে নাবিধসা রোগে আলু নষ্ট হয়।” গোঘাটের মামুদপুর গ্রামের চাষি দিবাকর মণ্ডলের অভিযোগ, “কৃষি দফতর থেকে বলা হচ্ছে, খড় পচিয়ে জমিতে সার হিসাবে ব্যবহার করতে। কিন্তু মহকুমার অধিকাংশ জমিই তিন-চার ফসলি। সেইসব জমিতে কম সময়ের মধ্যে খড় কী করে পচিয়ে নষ্ট করা হবে সেই পথ দেখাতে পারেনি কৃষি দফতর।” একই অভিযোগ পুরশুড়ার জঙ্গলপাড়ার বাসুদেব হাটি, খানাকুলের ঘোষপুরের শেখ মনসুর আলির মতো চাষিদেরও।

যন্ত্রে ধান কাটলে আর্থিক দিয়ে তাঁরা লাভবান হন বলে দাবি করেছেন চাষিরা। তাই বেশিরভাগ চাষি এখন যন্ত্রে ধান কাটার দিকেই ঝুঁকেছেন। অথচ, যন্ত্রে ধান কাটলেই নাড়ার পরিমাণ বাড়ে। জেলা কৃষি আধিকারিক জয়ন্ত পাড়ুই বলেন, “নাড়া পোড়ানো নিয়ে এখনও আমরা আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবিনি। প্রচার চলছে ধারাবাহিক ভাবে। আরামবাগ মহকুমা ছাড়া জেলার অন্যত্র তা অনেক কমেছে। আরামবাগে সচেতনতায় বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। গত বছর জেলায় ১ লক্ষ ৭৭ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ২২ হাজার হেক্টর জমিতে নাড়া পোড়ানো হয়ছিল। এ বার আমাদের ধারণা তা ১১ হাজার হেক্টরে নামবে।”

জয়ন্তবাবু মনে করেন, যন্ত্রে ধান কেটে চাষিরা যে লাভ করছেন, তার থেকে মাত্র ২০০ টাকা খরচ করে একজন শ্রমিক লাগালেই এক বিঘা জমিতে পড়ে থাকা খড় তুলে সরিয়ে দেওয়া যায়। তা হলে আর নাড়া পোড়াতে হয় না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement