নিতু সিংহ
দিদির ভালবাসার মানুষকে পছন্দ করত না ভাই। তাই নিয়ে দিদির সঙ্গে ঝগড়া হতো। দিদি কথা শোনেনি। প্রেম দিবসে দিদিকে গুলি করে খুনের অভিযোগ উঠল ভাইয়ের বিরুদ্ধে।
বিয়ে বা প্রেমকে কেন্দ্র করে পারিবারিক অশান্তি এবং পারিবারিক মর্যাদা রক্ষার নাম করে খুন বা অনার-কিলিং এই উপমহাদেশে ভূরি ভূরি। এ রাজ্যেও কিছু কিছু নজির বিরল নয়। নদিয়ায় বাবা-দাদা মিলে কুপিয়ে খুন বা কলকাতায় বোনের কাটা মাথা নিয়ে থানায় আত্মসমর্পণ করার মতো ঘটনা অনেকেরই মনে আছে। সে তালিকায় নাম তুলল হুগলির রিষড়াও।
রিষড়ার শ্রীকৃষ্ণনগরে মঙ্গলবার শিক্ষিকা নিতু সিংহ (২৪)-কে খুনের ঘটনায় প্রাথমিক ভাবে ভাই অমিতকেই খুনি বলে সন্দেহ করছে পুলিশ। ঘটনার পরই বাড়ি ছেড়ে পালায় অমিত। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, অমিতের পরিচিত এক যুবকের সঙ্গে এক সময়ে নিতুর বিয়ের কথা হয়েছিল। তাই অন্য কারও সঙ্গে দিদির সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি অমিত। এ নিয়ে মাঝেমাঝেই তর্কাতর্কি হতো দু’জনের। কিন্তু সেই ঝগড়ার জেরে যে শেষ পর্যন্ত মেয়েকে খুন হতে হবে, তা ভাবতে পারেননি বাবা উমেশ সিংহ। পেশায় বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের ব্যবসায়ী উমেশবাবু মঙ্গলবার শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে ময়না-তদন্ত করাতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘মাঝরাতে একটা আওয়াজ পাই। তার পরেই মেয়ের ঘরে গিয়ে দেখি, ওর শরীর রক্তে ভাসছে। ছেলে আমাকে ঠেলে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।’’ সকালে প্রতিবেশীরা শ্রীরামপুর থানায় ফোন করেন। নিতুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা জানান, অনেক আগেই তিনি মারা গিয়েছেন।
আরও পড়ুন।
অপহরণের নাটক ফেঁদে প্রেমিকের সঙ্গে দিঘায় বধূ
পুলিশ জানিয়েছে, নিতুর কপালের ডান দিকে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। ডান চোখ ঠিকরে বেরিয়ে এসেছিল। অন্য কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। পোশাক-আশাকে ধস্তাধস্তির ছাপও নেই। এ থেকে তদন্তকারীদের ধারণা, ঘুমের মধ্যেই তাঁকে গুলি করা হয়। যে আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি করা হয়েছে অমিত সেটি সঙ্গে নিয়েই পালিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, একটি ওয়ান শটার। কোথা থেকে সে আগ্নেয়াস্ত্র জোগাড় করল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
জেলার পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন বলেন, ‘‘কী কারণে তরুণীকে খুন করা হয়েছে জানতে সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ স্থানীয় সূত্রের খবর, নিতুর সঙ্গে সেনা-কর্মী এক যুবকের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। নিতুর মা-বাবা তা নিয়ে আপত্তি করেননি। কিন্তু অমিত মানতে পারছিল না। সে কোনও চাকরি করত না। পারিবারিক ব্যবসাতেও তাকে তেমন আমল দেওয়া হতো না। এ জন্যও তার মনে ক্ষোভ ছিল। দিদির সঙ্গে এ নিয়েও তার কথা কাটাকাটি হতো বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।