মহম্মদ আনোয়ার
ফোন পেয়ে শুক্রবার গভীর রাতে সাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন এক যুবক। আর ফেরেননি। শনিবার ভোরে তাঁর মাথা থেঁতলানো মৃতদেহ মিলল বাড়ির কাছেই।
ত্রিকোণ প্রেমে টানাপড়েনের জেরে মগরার নতুন গ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ আনোয়ার (২৪) নামে ওই যুবককে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। দেহটি মেলে মগরা ডাকঘরের কাছে জিটি রোডের ধার থেকে। পাশেই পড়েছিল আনোয়ারের সাইকেল। খুনে জড়িত অভিযোগে আনোয়ারের প্রেমিকা, ব্যান্ডেলের বাসিন্দা লক্ষ্মী রায় ওরফে টুম্পা এবং লক্ষ্মীর আর এক প্রেমিক, বলাগড়ের সাধুবাগান এলাকার বাসিন্দা কৃষ্ণদাস বাউলকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশের দাবি, জেরায় কৃষ্ণ খুনের কথা কবুল করে জানিয়েছে, সে আনোয়ারের সঙ্গে লক্ষ্মীর সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি। তা ছাড়া, আনোয়ারের কাছ থেকে চেয়েও সে ২০০ টাকা পায়নি, সেই রাগ ছিল। লক্ষ্মী নিজেকে নির্দোষ দাবি করে জানিয়েছে, খুনের হুমকি দিয়ে কৃষ্ণ শুক্রবার রাতে তাকে দিয়েই ফোন করিয়ে আনোয়ারকে ডাকে। জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের ডিএসপি (ক্রাইম) শুভাশিস চৌধুরী বলেন, ‘‘ধৃতদের জেরা করে এই খুনের পিছনে আরও কোনও রহস্য রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ খুনিদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেছেন নিহতের মা আয়েষা বিবি। একই দাবি এলাকাবাসীরও।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ১১ বছর আগে মগরার ড্যামরা ঢালের বাসিন্দা কালু রায় ওরফে রামজির সঙ্গে লক্ষ্মীর বিয়ে হয়। দম্পতির তিন ছেলেমেয়ে। কিন্তু সাংসারিক অশান্তির কারণে বছর দুয়েক আগে কালুর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ছেলেমেয়েদের ছেড়ে লক্ষ্মী ব্যান্ডেলে বাপেরবাড়িতে চলে আসে। এরপরেই কৃষ্ণদাসের সঙ্গে তার পরিচয়। দু’জনের সম্পর্ক গভীর হয়।
মগরার গঞ্জ বাজারের কাছে আনোয়ারের শাঁখা-পলা-চুড়ি দোকান রয়েছে। ওই দোকানে চুড়ি কিনতে আসত লক্ষ্মী। সেই সূত্রে আনোয়ারের সঙ্গেও তার আলাপ এবং পরে সম্পর্কও তৈরি হয়। সে কথা কানে যায় কৃষ্ণর। এ নিয়ে লক্ষ্মীর সঙ্গে তার অশান্তি শুরু হয়। কিছুদিন আগে লক্ষ্মীর মাধ্যমে আনোয়ারের কাছ থেকে ৩০০ টাকা চায় কৃষ্ণ। কিন্তু আনোয়ার ১০০ টাকা দিয়েছিলেন।
শুক্রবার রাত রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ লক্ষ্মীর ফোন পান তিনি। শনিবার ভোরে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁর মৃতদেহটি দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন। জেরায় কৃষ্ণ পুলিশকে জানিয়েছে, ডাকঘরের কাছে এলে প্রথমে না-পাওয়া ২০০ টাকা নিয়ে আনোয়ারের সঙ্গে তার বচসা হয়। তারপরে ইট দিয়ে সে আনোয়ারের মাথা থেঁতলে দেয়। মৃত্যু নিশ্চিত করতে গাছের মোটা ডাল দিয়ে পেটায়। তবে, খুনে ব্যবহৃত সেই ডাল পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি।
পুলিশ জানায়, নিহতের মোবাইলের সূত্র ধরেই লক্ষ্মীর হদিস মেলে। কৃষ্ণকেও ধরা হয় ব্যান্ডেল থেকে। তাদের চুঁচুড়া আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ১৪ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
নিহতের মামা রঞ্জিত সাউ বলেন, ‘‘কী এমন ঘটল যে ওকে প্রাণে মেরে ফেলা হল!’’ ধৃত লক্ষ্মীর প্রাক্তন স্বামী কালু বলেন, ‘‘লক্ষ্মীর আচরণের জন্য আমার সংসার ভেঙেছে। এ বার একটা তরতাজা ছেলের প্রাণ গেল।’’