বার্তা: সমাবেশে সূর্যকান্ত মিশ্র। ছবি: তাপস ঘোষ
জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে এ রাজ্যে আতঙ্ক ক্রমশ বাড়ছে। ইতিমধ্যে আট জনের মৃত্যুও হয়েছে। ভোটার তথ্য যাচাইয়ের কাজ চলাকালীনই এ রাজ্যে ডিজিটাল রেশন কার্ড তৈরির কর্মসূচিও চলছে। দু’য়ে মিলে ছড়াচ্ছে ‘বিভ্রান্তি’ও। সাধারণ মানুষের এই আতঙ্ক-বিভ্রান্তিকে হাতিয়ার করেই পথে নেমেছে সিপিএম। কেন্দ্রের সমালোচনা তো আছেই, ভোটার তথ্য যাচাইয়ের কাজে মানুষের পাশে দাঁড়ানোরও কর্মসূচিও নিয়েছে তারা। রবিবার দুপুরে চুঁচুড়ার অমরপুর মাঠে দলের জেলা সমাবেশে সে কথাই আরও একবার জানিয়ে দিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূযর্কান্ত মিশ্র।
ঠা ঠা রোদে ভিড়ে ঠাসা ওই সমাবেশের মঞ্চ থেকে নিজের ‘অ্যানড্রয়েড মোবাইল’ ফোন তুলে ধরে সূর্যবাবু দলের কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনাদের যাঁদের হাতে অ্যানড্রয়েড ফোন আছে, তাঁরা একবার হাত তুলুন। আমি নিজেও হাত তুলছি। যাঁদের হাতে অ্যানড্রয়েড মোবাইল নেই, যাঁরা হাত তোলেননি, আপনাকে তাঁদের পাশেই দাঁড়াতে হবে আমাদের ঝান্ডা হাতে।’’
সারা দেশেই তাঁরা এনআরসি চালু করতে চান বলে জানিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এর পরেই নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ভোটার তথ্য যাচাইয়ের যে কাজ চলছে, তাকে এনআরসি-র প্রস্তুতি হিসেবে ধরে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে জেলায়। ওই কাজে নিজের কাছে ইন্টারনেট সংযোগ থাকা জরুরি। তাই প্রান্তিক যে সব মানুষের কাছে কম্পিউটার বা অ্যানড্রয়েড মোবাইল পৌঁছয়নি, দলের কর্মী-সমর্থকদের তাঁদের কাছে গিয়েই সাহায্য করতে বলছেন সূর্যবাবুরা। সূর্যবাবুর কটাক্ষ, ‘‘মোবাইল ফোন? বেশিরভাগ মানুষের ঘরে চাল-ডাল নেই। বাজারদর অগ্নিমূল্য। মানুষের খাওয়া জুটছে না। সে কথা কেন্দ্রের সরকার একবারও বলছে না। আমার নিজেরই জন্মের প্রমাণপত্রের সব কাগজ ঠিকঠাক নেই। মুখ্যমন্ত্রীও জানিয়েছেন, তাঁরও ওই সব কাগজপত্র হাতের কাছে নেই। বাচ্চাকে লেখাপড়া শেখাবেন না এনআরসি নিয়ে পড়ে থাকতে হবে? এখন মানুষের দৃষ্টিকে নানা দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’ রাজ্যের ডিজিটাল রেশন কার্ড তৈরির কর্মসূচিও এক সঙ্গে চলায় সাধারণ মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়ছেন বলেও সূর্যবাবু মনে করেন।
এ দিনের জেলা সমাবেশে সিপিএমের জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ থেকে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী সুদর্শন রায়চৌধুরী, দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য— সবাই নাগরিকপঞ্জির বিরুদ্ধে সরব হন। সুদর্শনবাবুর প্রশ্ন, ‘‘আমাদের দেশে মাত্র ৩৭% মানুষের হাতে মোবাইল ফোন আছে। তা হলে বাকিরা কী করবেন?’’
সিপিএম রাজ্য সম্পাদকের ৫০ মিনিটের টানা বক্তব্যে নাগরিকপঞ্জির কথা বারবার ঘুরেফিরে এলেও অন্য বিষয়ও এসেছে। এসেছে কাশ্মীর ভাগের কথা এবং সেই সূত্রে রাজ্য ভাগের প্রসঙ্গ। সূর্যবাবু বলেন, ‘‘শুধু কাশ্মীর নয়, রাজ্যকে বিভাজনের যে চেষ্টা হবে না, সেই নিশ্চয়তা কিন্তু আর নেই। দার্জিলিংকে বিচ্ছিন্ন করতে এ রাজ্যেও কাশ্মীরের কৌশল নেওয়া হতে পারে। কাশ্মীরে মাত্র চার ঘণ্টায় সেনা নামিয়ে কী পরিস্থিতি তৈরি করা হল? এখন যদি দার্জিলিংয়ে সেনা নামিয়ে বলা হয়, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, আপনি কী করবেন? উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে না কে বলতে পারে?’’