জন্মদিনে কেক মুখে কালিয়া। —নিজস্ব িচত্র
বেলুনে সাজানো ঘর-বারান্দা। অতিথি-অভ্যাগত হাজির। টেবিলে রাখা সুদৃশ্য কেকে কামড় বসাল কালিয়া। খচাখচ ছবি উঠল। সবাই গেয়ে উঠলেন, ‘হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ’। কালিয়া হতভম্ভ!
কালিয়া এক পথ-কুকুর। চন্দননগরের শাওলি বটতলা এলাকার বাসিন্দা পশুপ্রেমী সঞ্চিতা এবং পিকাসো পাল নামে এক দম্পতির বাড়িতে শনিবার তারই জন্মদিন পালিত হল। কিন্তু পথ-কুকুরের জন্মদিন পালন কেন?
সঞ্চিতা-পিকাসো পশুপ্রেমী। প্রতিদিন বেশ কিছু পথ-কুকুরকে খেতে দেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের চিকিৎসার দায়িত্বও স্বেচ্ছায় নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন এই দম্পতি। তাঁরা জানান, ২০১৮ সালের অগস্টে এলাকায় তিনটি পথ-কুকুর খাদ্যে বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। দু’টিতে বাঁচানো না গেলেও তাঁদের শুশ্রুষায় একটি কুকুর সুস্থ হয়ে ওঠে। ওই বছরের ৭ ডিসেম্বর সে সন্তান প্রসব করে। সঞ্চিতারা কুকুর-ছানার নাম দেন কালিয়া। রাস্তায় ঘুরলেও কালিয়ার পালবাড়িতে আসা চাই-ই। শনিবার তার এক বছর পূর্ণ হল। সঞ্চিতা বলেন, ‘‘কালিয়া আমাদের খুব আদরের। আমাদের কাছে মেয়ের মতো। তাই ওর জন্মদিন পালন করলাম।’’ পিকাসো বলেন, ‘‘বাড়িতে বহু মানুষ শখে কুকুর পোষেন। কিন্তু রাস্তার কুকুরদের জন্য সহানুভূতি জানানোর লোকের খুবই অভাব। পাড়ায় এই কুকুরই রাতে পাহারাদারের কাজ করে। পথ-কুকুরদের উপরে যাতে মানুষের কিছুটা হলেও সহানুভূতি জন্মায়, তাই আমরা কালিয়ার জন্মদিন পালন করলাম।’’
জন্মদিনের দুপুরে কালিয়ার জন্য ছিল ভাত, পাঁচ রকম ভাজা, চিকেন স্যুপ, ছানার পায়েস, মিষ্টি দই। শেষপাতে ক্ষীর। চেটেপুটে সব খেয়েছে সে। তার জন্মদিন উপলক্ষে এ দিন অন্য পথ-কুকুরদেরও অন্য দিনের তুলনায় ‘স্পেশ্যাল’ খাবার জুটেছে। সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে কালিয়ার পরণে ছিল নীল রঙের নতুন জামা। আমন্ত্রিতেরা তার জন্য উপহার এনেছেন। কারও হাতে ছিল খেলার বল, কেউ এনেছেন মুরগির মাংস। কেউ উপহার দিয়েছেন বিস্কুট। নতুন জামাও উপহার পেয়েছে সে।
কেক-পর্ব শেষে ছিল অতিথি-ভোজন। ঘরময় ঘুরছিল কালিয়া। লেজ নাড়ানোর ভঙ্গিমা বলে দিচ্ছিল, সে খুব খুশি।